অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে মন্তব্য করে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, এই সরকারের সফলতা-ব্যর্থতার ওপর আমাদের আগামীর বাংলাদেশ, আমাদের পুরো জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। সুতরাং অন্যদের চেয়ে এই সরকারের কাজের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং আমাদের প্রত্যেককে তাদের ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ তাদের কার্যক্রম সঠিক হচ্ছে কিনা, মানুষ উপকৃত হচ্ছে কিনা, মানুষের মধ্যে কোনো অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে। তাই আমরা শিক্ষকদের এই যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানাই। বেতন কাঠামো, বেতন বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানাই। 

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের শূন্যপদে বদলি’র দাবিতে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষকদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। শূন্য পদে সর্বজনীন বদলি প্রত্যাশী শিক্ষক ঐক্যজোটের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। 

নুরুল হক নুর বলেন, আমাদের আন্দোলনের কারণে সরকার আজকে গদিতে বসেছে। আমাদের ত্যাগ, আমাদের শ্রম, আমাদের নির্যাতন -নিপীড়নের মাধ্যমেই আজকে তারা উপদেষ্টা হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক দল... রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত সরকারে আসতে চাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের কিছু পদক্ষেপ নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে, এটা হচ্ছে তাদের কাজ। আমরা এখনো সরকারে যাইনি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব ধরনের কাজে আমাদের সহযোগিতা থাকবে। ইতোমধ্যে আমি ফেসবুক, ইউটিউবসহ মূলধারার মিডিয়ায় সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করেছি। এটা করতে হবে, কারণ তাদের কোনো ভুল পদক্ষেপে মানুষের মধ্যে, পেশাজীবীদের মধ্যে যেন অসন্তোষ তৈরি না হয়। মানুষের মধ্যে যেন কোনো সংশয় তৈরি না হয়। 

তিনি বলেন, কিছুদিন আগে সচিবালয়ে আনসাররা আন্দোলন করেছিল, ছাত্র-জনতা এসে পরে এটা মোকাবিলা করেছিল। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিদিন আন্দোলন করেছে। তখন আমরা সবাইকে অনুরোধ করেছিলাম, আপনারা সরকারকে অন্তত দুই-তিন মাস সময় দিন। আপনাদের সব রকম যৌক্তিক দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়া হবে। যে বৈষম্য নিরসনের জন্য আমরা আন্দোলন করেছি, এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এসে আমরা কোনো রকম বৈষম্য সমর্থন করি না, করব না।

নিজেদের অবস্থানের কথা জানিয়ে শিক্ষকরা জানান, এমপিওভুক্ত হাজার হাজার শিক্ষক নিজ এলাকা থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। নামমাত্র বাড়িভাড়া এক হাজার টাকা ও চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকাসহ অতি সামান্য তথা ১২ হাজার ৭৫০ টাকা নিট বেতনে বাড়ি থেকে দূরদূরান্তে অবস্থান করে খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান সবাইকে ছেড়ে বাড়ি থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে অবস্থান করায় শিক্ষকরা মানসিকভাবে চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। যার দরুন ক্লাসে পাঠদান কার্যক্রমে মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তারা বলেন, বদলি চালু করতে সরকারের কোনো আর্থিক বাজেটের প্রয়োজন নেই। ২০২১ এর এমপিও নীতিমালার পূর্বে সব এমপিও নীতিমালায় এমপিওভুক্ত সব ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের বদলি চালুর বিষয়টি উল্লেখ ছিল। আমরা বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকরা বহুদিন যাবত বদলি চালুর জন্য সরকারের কাছে আবেদন নিবেদন করে আসছি। কিন্তু বিগত সরকার বদলি চালুর ব্যাপারে কোনো আন্তরিকতা দেখায়নি। বরং বিগত সরকারের পদত্যাগের দাবিতে যখন রাজপথ উত্তাল, তখন ১ আগস্ট শুধুমাত্র এনটিআরসিএ সুপারিশ প্রাপ্তদের পারস্পরিক বদলির প্রজ্ঞাপন দেয়, যা ১ শতাংশ শিক্ষকেরও উপকারে আসবে না। শূন্য পদে বদলির খসড়া প্রস্তাবনাসহ আমরা কয়েকবার সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করেছি। তবুও বিগত সরকারের মতো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও সময়ক্ষেপণ করছে।

এ সময় অবস্থান কর্মসূচিতে বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের (বাবেশিকফো) যুগ্ম মহাসচিব জহিরুল ইসলাম, জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব জসিম উদ্দিনসহ বিভিন্ন শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক হাবিবউল্লাহ রাজু, মো. রবিউল ইসলাম, এ এইচ বাবলু, তোফায়েল সরকার, রফিকুল ইসলাম, আতিকুল ইসলাম, মেজবাউল হাসান, রুহুল মামুন, উজ্জ্বল দাস, জেড আই জাহিদ, রাশিদা আক্তার বেলাল হোসেন, আফিস, মাহমুদা খানম, মোহাম্মদ আলী, নুরুজ্জামান মন্ডল।

ওএফএ/কেএ