ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে ব্যর্থ করতে আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত ওয়ার্ড সভাপতি-সেক্রেটারি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

গোলাম পরওয়ার বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের এক মাস পরও আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তি যারা প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থেকে ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালিয়েছে, গুম করেছে, লাশ বানিয়ে আগুনে পুড়িয়েছে, সেই প্রেতাত্মারা এখনো রয়ে গেছে। দেশকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পর্যন্ত নিতে হলে এই জঞ্জালদের সরাতে হবে।

তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলনের কাজ করতে গিয়ে আমাদের সামনে অনেক পরীক্ষা, জুলুম নির্যাতন এসেছে, নানাভাবে জামায়াতে ইসলামীর অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে, এবার মৃত্যু-ভয়হীন চেতনা নিয়ে বাতিলের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। আজকে আমরা মুক্তচিন্তে মানুষের সামনে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে পারছি। ঐতিহাসিক এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে ছাত্র-জনতার সংগ্রাম। 

তিনি আরও বলেন, শহীদের রক্তের ওপরে দাঁড়িয়ে আমরা গর্বের অংশীদার। কিন্তু এখনো আমরা মুক্তির মঞ্জিলে পৌঁছতে পারিনি। আমাদের মঞ্জিল এখনো বহুদূরে। বরং এই গণবিপ্লব নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী যে নতুন বাংলাদেশের কথা বলে, ইসলামী সমাজ গঠনের কথা বলে, যে স্বপ্নের কথা বলে, যেখানে মানুষের নিরাপত্তাহীন জীবন থাকবে না, কষ্ট অভাব, দুর্দশা থাকবে না, অবিচার, বর্বরতা থাকবে না। 

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। কাঙ্ক্ষিত মঞ্জিলে পৌঁছাতে বাধা আসবেই। মৃত্যুভয়হীন শক্তিকে কোনো অত্যাচার নির্যাতন, ৪৪ ধারা জারি, জায়গায় গুলি কোনো কিছু দিয়ে দমিয়ে রাখা সম্ভব না। 

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লব পরবর্তী নতুন যাত্রাকে ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য বিপ্লবকে ব্যর্থ করার দেশি-বিদেশি আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তি, প্রেতাত্মা এখনো নতুন প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মেরে বসে আছে। তারা নতুন নতুন অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে কথা দিয়েছি, একটি অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে একটা যৌক্তিক সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে রাজি আছি। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের এক মাস পরও আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তি যারা প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থেকে ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালিয়েছে, গুম করেছে, লাশ বানিয়ে আগুনে পুড়িয়েছে, সেই প্রেতাত্মারা এখনো রয়ে গেছে। 

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলবো চোখ-কান খোলা রাখুন। সচেতন হয়ে এখনো যদি নিজেদের দায়িত্বের পথ প্রশস্ত না করেন, সুগম না করেন, এসব জঞ্জালকে ছাফ না করেন, তাহলে এরা দেশকে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন পর্যন্ত দেশকে নিতে দেবে না। এই গণআন্দোলন ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। যদি ব্যর্থ হয় তাহলে বিপ্লবের শহীদরা কষ্ট পাবে, তাহলে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আবারো আরেকটি রক্তাক্ত সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হবে। আমরা চাই না, এদেশে আরেকটা কালো দিন আসুক৷ জাতিকে সাবধান থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কারণ বিপ্লবকে আমরা নতুন অভিযাত্রা মনে করি। 

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকনসহ জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

জেইউ/কেএ