সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তানভীর নামে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কেরাণীগঞ্জ আওয়ামী লীগের এক নেতার কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কল রেকর্ডটি একাধিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হলেও ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। 

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলেও বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কেউই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি।

ভাইরাল কল রেকর্ডটিতে তানভীর নামে ওই নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘বাংলাদেশ থেকে একটা ভিডিও নিউজ আসছে আপা, সেখানে বলা হয়েছে আপনাকে নাকি হেলিকপ্টার দিয়ে ভারতের গাজিয়াবাদ থেকে দিল্লিতে ট্রান্সফার করা হয়েছে। খুব কষ্ট হয় আপা। আপনি বললে আমি এই মুহূর্তেই দেশে চলে আসব।’

তানভীরের কথা শুনে শেখ হাসিনা জানতে চান, ‘কোথায় নিয়ে গেছে? হেলিকপ্টারের ছবি দিয়েছে? আজগুবি কথা বলে এরা। আমি কিন্তু দেশের খুব কাছেই আছি। যেকোনো সময় চট করে ঢুকে পড়তে পারি। কিন্তু এখন তুমি দেশে গেলে মামলা খাবে। আমার বিরুদ্ধে ১১৩টি মামলা হয়েছে। এটা কোন ধরনের কথা? আমার পরিবারের কেউ বাকি নাই। সবার নামে মামলা দেওয়া হয়েছে।’

তখন তানভীর বলেন, ‘আপা আপনার কাছে কল দিয়েছি, এমদাদ ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা এখানে (বিদেশে) মিটিং-মিছিল করছি। কিন্তু কেরাণীগঞ্জের অবস্থা খুব খারাপ আপা। সব নেতাকর্মী এলাকার বাইরে। যতটুকু পারছি, যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাহায্য করতেছি। এখন আপনি যদি বলেন এখান থেকেই তাদের সাহায্য করতে, তাহলে সেটা করব। আর যদি বলেন যে না দেশে গিয়ে একটু গোছানোর চেষ্টা করতে সেটা করব।’

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব মার্ডার কেস, আর কিছু না। এখন এখানে বসে তুমি সাহায্য করো, সেটা সব থেকে বেশি কাজে লাগবে। আরেকটু পরে গেলেই হবে।’

তখন আওয়ামী লীগের নেতা তানভীর বলেন, ‘আইনজীবীরা দাঁড়াতে পারতেছে না, এ বিষয়ে আপনি কিছু পরামর্শ দেন আপা।’ জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আইনজীবীদের বলো কোর্টে যাওয়ার আগে যেন আমাদের লোকজন জড়ো করে সেখানে যায়। এ ছাড়া, আর কোনো পথ নেই।’

এ সময় কাঁদতে কাঁদতে তানভীর বলেন, ‘আপা কষ্ট লাগে, আপনি যে মিডিয়াদের দিয়ে আসছেন, এরা সত্য বলে না, এরা কাজ করে না আপা। কই যাব আপা? আল্লাহ আপনাকে বাঁচাই রাখুক। আমরা আছি আপা। আপনি যখন নির্দেশ দেবেন— তানভীর তুমি আমেরিকা থেকে দেশে চলে আস, এসে কামরাঙ্গীরচর-কেরাণীগঞ্জে দলীয় নেতৃত্ব গোছাও, আপনি বললে সাথে সাথে দৌড় দেব আপা।’

অডিও ক্লিপটিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে তানভীর নামে ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে দেশের চলমান বিভিন্ন পরিস্থিতি, ড. ইউনূস ও সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়। এসব বিষয় নিয়ে হাসিনা ওই নেতাকে বিভিন্ন পরামর্শ দেন। তবে তানভীর নামের ওই নেতার পরিচয় এবং অডিও ক্লিপটির সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউই অডিও রেকর্ডটির সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেননি। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। আর উনি (তানভীর) যেই লেভেলের নেতা সেই জায়গা থেকে এটা বিশ্বাস করা কঠিন মনে হচ্ছে। শেখ হাসিনা যদি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক কাউকে ফোন দিতেন, সেটা বিশ্বাস করা যেত। 

এমএসআই/এমজে