জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে থাই চি রেস্টুরেন্টে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াত আয়োজিত সিনিয়র ও বিট রিপোর্টারদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।

মতবিনিময় সভাটিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন সভাপতিত্ব এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম পরিচালনা করেন।

শফিকুর রহমান বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছর সরকারের জুলুম-নির্যাতনের কারণেই আমরা আপনাদের সাথে খোলা মনে কথা বলতে পারিনি। গণমানুষের কল্যাণে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারিনি। অথচ শুধু মানুষ নয় বরং আল্লাহর সৃষ্টিকে সম্মান করা আমাদের দায়িত্ব। মানুষ সৃষ্টির সেরা। মানুষের কল্যাণের জন্যই সবকিছু সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই মন্দের বিপরীতে মন্দের চর্চার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি সাংবাদিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, সাংবাদিক ও রাজনীতিকরাই সমাজ পরিবর্তনে এবং ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় যুগপৎভাবে কাজ করেন। রাজনীতিকরা যেমন রাজপথে গুলিতে মারা যান, সাংবাদিকরাও ঠিক তেমনি। তাই আমাদের পেছনে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই। জাতীয় স্বার্থে এক কাতারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। 

তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।

জামায়াতের আমির বলেন, আমাদের আর পেছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। তাই জাতীয় স্বার্থেই আমাদের দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতি ঐক্যবদ্ধ হলে পুরো বিশ্বই আমাদের সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করবে। আর দেশের সকল নাগরিকের অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে হলে গণমাধ্যমকর্মীসহ রাজনীতিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। উদ্দেশ্য হবে গণমানুষের মুক্তি ও কল্যাণ। নিকট অতীতে গণমাধ্যম ও গণমাধ্যম কর্মীদের কলমকে রুদ্ধ করা হয়েছিল। সাময়িকভাবে হলেও সে তালা এখন খুলেছে। এ বিজয় ধরে রাখার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

বীজতলা সুন্দর হলে তা মহীরূহে পরিণত হবে এবং তা এক সময় ছায়া ও ফল দেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্জিত বিজয়কে পরিচর্যা করতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। 

তিনি আরো বলেন, আমরা প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। রাজনৈতিকভাবে আমাদের ওপর যারা জুলুম-নির্যাতন করেছে, আমরা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। আমরা সংশোধন ও ক্ষমার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তবে কোনো ভিকটিম বা ভিকটিমের পরিবার যদি আইনের আশ্রয় নেয়, তাহলে আমরা তাদেরও সহযোগিতা করব। দল হিসেবে আমরা কোনো প্রতিশোধ নেব না। আমরা ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাসী। আর আদর্শ ডেমোক্রেসির মূলমন্ত্র হচ্ছে যার যার মতো স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার এবং পরমতের প্রতি সহনশীলতা। 

সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ছাত্র-জনতার যুগপৎ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল সমাজের সব পর্যায়ে ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা। তাদের শ্লোগানই ছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। আমাদের দেশে গণমাধ্যম কর্মীরাও জাস্টিস থেকে বঞ্চিত। তারা স্বাধীনভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েজবোর্ড দেয় না। ফলে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। এখন সময় এসেছে এসব বৈষম্যের অবসান ঘটানো। জামায়াত সব সময় সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার থাকবে।

তিনি দেশ ও জাতির স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সব ধরনের ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
 
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান ও নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ।

জেইউ/কেএ