ভারত সরকার ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে পানিতে ডুবিয়ে মারার ব্যবস্থা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, “আমরা শুনে আসছি, প্রতিবেশী দেশ ভারত আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু। কিন্তু কথিত এই বন্ধু যখন আমাদের পানির প্রয়োজন হয় তখন শুকিয়ে মারে, আবার যখন বর্ষার মওসুম আসে তখন পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদের বন্যায় ভাসায়।”

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন বন্যাদুর্গত এলাকায় বানভাসী মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণের সময় তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “ভারত ফারাক্কাসহ অভিন্ন ৫৪টি নদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের বিশাল এলাকা মরুভূতিতে পরিণত করেছে। ভারত শুকনা মৌসুমে পানি আটকিয়ে রাখে, আর বর্ষায় মওসুমে রাতের আধারে একসাথে সব গেট খুলে দেয়। গ্রীষ্মে যখন আমাদের পানির প্রয়োজন হয়, তখন তারা আমাদেরকে পানি না দিয়ে শুকিয়ে মারে। পানির অভাবে হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়। আবার বর্ষার মৌসুমে যখন পানির প্রয়োজন নেই, তখন পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদেরকে বন্যায় ভাসায়। ভারত সরকারের এহেন অমানবিক কর্মকাণ্ডে আমরা হতবাক। স্বভাবতই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে ভারত আমাদের কেমন বন্ধু!”

তিনি বলেন, “পূর্বাঞ্চলের ১২টি জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেয়ায় এসব এলাকায় বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এসব এলাকার বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধকোটি মানুষ। মাছের ঘের, জমির ফসল, তরিতরকারী, ফলের বাগান পানিতে তলিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন লাখো কোটি মানুষ।”

এ সময় আমীরে জামায়াত সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষদের বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান এবং বক্তব্য শেষে সকল প্রকার দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতে আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করেন।

তিনি আরও বলেন, “আমাদের একটা সরকার ছিল সাড়ে ১৫ বছর। তারা বলত আমাদের দেশকে সিঙ্গাপুর, কানাডা বানিয়েছে। এই হলো সিঙ্গাপুরের দৃশ্য। এগুলো সব ছিল মিথ্যা এবং ভোগাস। তারা জনগণের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। মানুষ তার নিজের বাসায় একটা পর্দা টানালে বলতো- এ ঘরে জঙ্গি আছে। ওদের মাথায়, ওদের মগজে সব সময় জঙ্গি জঙ্গি ভাব ছিল। কিন্তু আসল জঙ্গি তো তারাই, যারা মাথায় হেলমেট নিয়ে হাতে মুগুর নিয়ে মানুষের উপর আক্রমণ চালায়। এরাই আসল জঙ্গি।”

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমাদের ছাত্র, তরুণ ও যুবসমাজ পুলিশের সামনে বুক চেতিয়ে, বুকের মধ্যে গুলি নিয়ে সন্ত্রাসীদের তাড়িয়েছে বাংলার বুক থেকে। আমরা মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি এই জন্য যে, তিনি আমাদের থেকে জালিম বিদায় করেছেন। মহান রবের নিকট দোয়া করি চিরদিনের জন্য যেন এ জালিমের বিদায় হয়। আর কোনো জালিমের যেন আগমন না ঘটে। দেশ যেন সুবিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়।”

ফেনী জেলায় ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, জেলা আমীর একেএম শামসুদ্দিন, জেলা সেক্রেটারি মুফতি আব্দুল হান্নানসহ জেলা-উপজেলার সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীগণ। এছাড়াও লক্ষ্মীপুরে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা দ্বীন মোহাম্মদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, জেলা জামায়াতের আমির রুহুল আমিন ভূইয়াসহ আরও অনেকে।

টিআই/এমটিআই