বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা তো সবাই সমর্থন দিচ্ছি। কারণ এই পরিবর্তনে যেসব মৌলিক কাঠামো ও প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে এগুলোকে তো একটা ট্র্যাকে আনতে হবে। সুতরাং আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আশা করি সামনের কাজগুলা যত দ্রুত সম্ভব তারা করতে পারবে।

রোববার (১৮ আগস্ট) বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে চিকিৎসাধীন আহতদের দেখতে গেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। 

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আন্দোলনে ছাত্র জনতার ওপর নির্বিচারে যেভাবে গুলি করা হয়েছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তারা যে এখনো বেঁচে আছে এটা আশ্চর্যের ব্যাপার। অনেকের অবস্থা এখনো জটিল, কঠিন সময় যাচ্ছে। তাদের পরিবারের কাজকর্ম সব বন্ধ। ওরা তো সবাই এখন বিচারের অপেক্ষায় আছে। আমরা রাজনৈতিক জীবনে মনে হয় না বাংলাদেশে ইতিহাসের এ ধরনের নির্বিচারে গুলি করে হত্যাকাণ্ড চলেছে। এই আহত লোকগুলো যারা আছে তারা এখনো আল্লাহ রহমতে বেঁচে আছে। এদের বাকি জীবন কীভাবে কাটবে এটাও একটা বিষয় আছে। তাদের অনেকে ভালো করে হাঁটা চলা করতে পারবে না। স্বাভাবিক জীবনযাপনও করতে পারবে ন। সুতরাং এরা বেঁচে থাকলেও স্বাভাবিক জীবনযাপন করার অবস্থা তাদের থাকবে না।

তিনি বলেন, আন্দোলনে অনেকে অন্ধ হয়ে গেছে। অনেকের পা চলে গেছে আবার অনেকের পা থেকেও সেটি অবশ হয়ে গেছে। তারা হাঁটা চলা করতে পারবে না। এমন দুর্বিষহ অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে এদের পুনর্বাসনের ব্যাপার আছে। আর জাতিরও তো পুনর্বাসনের ব্যাপার আছে। যে অবস্থায় আমরা গিয়ে পৌঁছেছি, এরকম কিছু আমরা কোনোদিন দেখিনি। এদের ত্যাগের বিনিময়ে যদি বাংলাদেশ সামনের দিকে এগোতে পারে তবেই আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ দেখতে পাব।

এর আগে দুপুরে নগরীর প্রবর্তকের ইসকন মন্দির ও রাধাকৃষ্ণ মন্দির পরিদর্শন গিয়ে খসরু বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আমাদেরকে পরিষ্কারভাবে বলেছেন, বিএনপি সংখ্যালঘু বলে কোনো শব্দে বিশ্বাস করে না। কারণ বাংলাদেশের সংবিধান সবাইকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের সংবিধান প্রত্যেকটা নাগরিককে ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার দিয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্তের মধ্যে যারা বসবাস করে তাদের সবাইকে সমানভাবে দেখতে হবে। এটা নিশ্চিত করা শুধু রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়, যারা রাজনীতি, সমাজনীতি করে তাদের সবার। আমি এখান থেকে বলব চট্টগ্রামে যদি কোন হিন্দু মন্দিরে আক্রমণ হয়ে এটার দায় আমাদেরকে নিতে হবে। এই দায় কিন্তু এড়ানো যাবে না। আমার জানামতে চট্টগ্রাম মহানগরীতে কোনো মন্দিরে হামলা বা আক্রমণ হয়নি। আমি ঢাকা থেকে আমাদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি সবসময়। মন্দিরের বিষয়ে আমি খোঁজখবর নিয়েছি। কমিটিও করা হয়েছে, তারা আমাকে ছবিও পাঠিয়েছে। আমি সেখান থেকে মনিটরিং করেছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম ৬৫% মানুষ ২৫ বছরের নিচে বর্তমানে। এরা কিন্তু দুনিয়াদারি বুঝে এবং জানে। সবার হাতে হাতে এখন একটা করে মোবাইল ফোন রয়েছে। সবাই সারা দুনিয়া দেখতেছে এখন। এর মধ্যে আমি এখানে বক্তব্য রাখছি একই সময়ে দুনিয়াতে আরও ৫০-১০০ টা বক্তব্য চলছে। আমার বক্তব্য ভালো না লাগলে দুই মিনিট পর সুইচ অফ করে আরেক দিকে চলে যাবে। মানুষকে আর বোকা বানানোর সময় নাই। সব কিছু বিশ্ব দেখেছে। 

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, চট্টগ্রাম রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী শক্তিনাথানন্দজীসহ ধর্মীয় নেতারা।

আরএমএন/এমএ