ভারতে বসে শেখ হাসিনা দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে এক দোয়া মাহফিলের আগে তিনি এ অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দীর্ঘ লড়াই করেছি। যদি মনে করেন, আমাদের লড়াই শেষ হয়ে গেছে তাহলে ভুল করবেন। এটা ভাসমান অবস্থায় আছে, যে কোনো মুহূর্তে ভারতে বসে শেখ হাসিনা এর সুযোগ নিতে পারেন। ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা চক্রান্ত শুরু করেছেন, সেই চক্রান্ত প্রতিরোধ করাই আমাদের কাজ।

বিএনপি ১৭ বছর ধরে লড়াই করে একটা ভিত্তি তৈরি করেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন,  সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের ছেলেরা, তরুণ যুবক-ছাত্ররা আন্দোলন বিজয় পর্যায়ে নিয়ে গেছে। বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে। আবু সাঈদ থেকে শুরু করে প্রায় হাজার খানেক ছাত্র-শিক্ষার্থী প্রাণ দিয়েছে। ৩-৫ আগস্ট ছাত্রদলের অনেকে ছেলেরা প্রাণ দিয়েছে। আমি পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলাম, সেখানে ১২৪ জন ছিল। আমি খবর নিয়ে দেখলাম, সেখানে ৯০ জন ছাত্রদলের ছেলে। সংঘাত সৃষ্টি করা যাবে না। সকলকে এক হয়ে এখন কাজ করতে হবে।

উপাসনালয়-মন্দির-গির্জা পাহারায় শান্তি বিগ্রেড তৈরি করুন

মির্জা ফখরুল বলেন, সাম্প্রদায়িকতা ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচারের ধুয়ো তুলে আওয়ামী লীগ আরেকটা ঝগড়া করতে চায়। এটা একটা চক্রান্ত। 

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, আপনাদের দায়িত্ব নিজ নিজ এলাকায় নিজের নিয়ে শান্তি বিগ্রেড তৈরি করেন, শান্তি বিগ্রেড তৈরি করে পাহারা দেবেন। সমস্ত সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়, মন্দির, গির্জা পাহারা দেবেন। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠা, তাদের জীবন-মালের দায়িত্ব কিন্তু আপনাদের। আমার একজন শিক্ষক ছিলেন, ঈমানদার আলেম মাওলানা তমিজ উদ্দিন। তিনি বাবরি মসজিদে হামলার সময়ে সকলকে বলেছিলেন, সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগুরুদের কাছে পবিত্র আমানত। এই আমানত যে খেয়ানত করে সে আর মোমেন থাকে না। একথাগুলো সবাইকে মাথায় নিতে হবে, তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে।

নতুন ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যখন সোশ্যাল মিডিয়াতে পত্র-পত্রিকায় বিরূপ খবর দেখি তখন কিন্তু আতঙ্কিত হই। জনগণের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবার জন্য আবার কোনও নব্য ফ্যাসিবাদ এসে উপস্থিত হচ্ছে কিনা এ দিক থেকে সজাগ থাকতে হবে।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ঐক্য, ঐক্য, ঐক্য এবং ধৈর্যশীল, সহনশীল অবস্থা, ডিসিপ্লিনের মধ্যে আমাদেরকে চলতে হবে। কালকে আপনাদের প্রোগ্রাম ছিলো না? কয়জন আসছিলেন। অনেক কম, আজকেও কম। কি জন্য? জয় হয়ে গেছে?

তিনি বলেন, এই যুদ্ধ জারি রাখতে হবে, এই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। তা না হলে আমরা কিন্তু অনেক বিপদে পড়ে যাবো। এক ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করেছি আমরা। নব্য ফ্যাসিবাদ যেন না আসতে পারে তার জন্যে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে।

জঞ্জাল সাফ করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে কিছু সময় দিতে হবে

মির্জা ফখরুল বলেন, মনে রাখতে হবে, এই সরকার একেবারে নরম সরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার । এটা মনে রাখতে হবে। তার দায়িত্ব একটা নির্বাচন করে দিয়ে যাবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জঞ্জাল জমা হয়েছে তো। এই জঞ্জাল তো সাফ করতে হবে। এজন্য তাদেরকে কিছু সময় তো দিতে হবে। কিন্তু আমাদের সংগ্রাম জারি রাখতে হবে। ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। ম্যাডামের যে বক্তব্য তা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। প্রেম ভালোবাসা দিয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে। কোনো প্রতিহিংসা নয়, কোনো প্রতিশোধ নয়।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর পরিচালনায় দোয়া মাহফিলে অংশ নেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ প্রমুখ।

এএইচআর/এমএসএ