বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতাদের আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী আইনে বিচার করতে হবে। কারণ তারা গণহত্যা করেছে। 

বৃহস্পতিবার(১৫ আগস্ট) বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক অবস্থান কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন তিনি।

স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচার ও নৈরাজ্য ঠেকাতে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। দুদিনের অবস্থান কর্মসূচির আজ ছিল শেষ দিন। 

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই। তবে, একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই— গণতন্ত্র, গণতন্ত্র, এর কোনো বিকল্প নেই।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই সরকারকে আমরা ততক্ষণ সহযোগিতা করব, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে। গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া মুক্ত হয়েছেন, কিন্তু তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। নেতাকর্মীদের নামে থাকা হাজার-হাজার মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ষড়যন্ত্রকারী নতুন তথ্য ছড়াচ্ছে, দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। তাদের দিয়ে একটা ঢাল তৈরি করে কীভাবে কৌশলে এখানে অস্থিতিশীলতা তৈরি করা সেই চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগ। তাদের মূল টার্গেট দেশ অস্থিতিশীল করে যদি ভারতের সাহায্য নিয়ে আবার ঢুকে পড়া যায়, তাহলে তারা রক্ষা পাবে।

বাংলাদেশে কোনো সংখ্যালঘু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদেশের সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। হিন্দু,বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও মুসলমান সবাই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছি। সেই সূত্রে যারা আজকে হিন্দু, হিন্দু সম্প্রদায় বলে আলাদা করে দিতে চায়, তাদের সঙ্গে আমরা একমত নই। আমরা সবাই এদেশের নাগরিক।

শেখ হাসিনা সীমা লঙ্ঘন করেছিল জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, কী অহংকার তার। মনে আছে, ২০১৪ সালে যখন সমগ্র দেশবাসী চাচ্ছিল নির্বাচনটা স্থগিত করে দিতে, বিএনপি দাবি করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে। তখন শেখ হাসিনা সবাইকে অসম্মান করেছিল। তখন পত্রিকার শিরোনাম ছিল অহংকার, হুঙ্কার, প্রতিশোধ। শেষ মুহূর্তেও তিনি মধ্যে প্রতিশোধের নেশায় ভরপুর ছিলেন। আল্লাহর কী হুকুম দেখেন, সেই তাকে পালিয়ে যেতে হলো সেই জায়গায়, যেখান থেকে তার গোড়া পোতা আছে।

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলতে চাই— এখন সময় আছে, আর ঝামেলা করবেন না, টিকতে পারবেন না। আজকে তো চেষ্টা করেছিলেন, আপনারা যাবেন ধামন্ডির-৩২ নম্বরে গিয়ে ফুল দিতে। কারও কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু ছাত্ররা ডুকতে দেয়নি। কেন দেয়নি? ওই মানুষটা আর কেউ দেখতে চায় না। তারা শেখ হাসিনার চেহারা আর দেখতে চায় না। সারা বাংলাদেশে যত আওয়ামী লীগার ছিল, তারা সবাই খুনি হাসিনাতে তৈরি হয়েছিল।

মির্জা ফখরুল বলেন, ঝামেলা না করে বাইরে না ঘুরে আত্মসমর্থন করেন। প্রভাবশালী উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে কীভাবে কোর্টে নিয়ে গেছে, দেখেছেন? আমাদের দলের নেতাকর্মীদের এইভাবে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতাদের আন্তর্জাতিক মানবতা বিরোধী আইনে বিচার করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, কারণ তারা গণহত্যা করেছে।

পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে হয়েছে কিনা আমি জানি না, ৬০ লাখ লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এখানে (সমাবেশে উপস্থিত) এমন কোনো মানুষ নেই যার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা নেই। শুধু তাই নয়, গত নির্বাচনের আগে আমাদের প্রায় আড়াই হাজার নেতাকর্মীকে সাজা দিয়েছে। গত বছরের ২৮ অক্টোবর পরে ২৭ হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করেছে। তার আগের বছরে আন্দোলনে আমাদের ২২ জনকে নেতাকর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে।

গত ১৫ বছরে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করার জন্য বিএনপি যে মূল্য দিয়েছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল বলে উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, অনেক স্ত্রী তার স্বামীকে হারিয়েছে, কেউ তার বাবাকে, কেউ ছেলেকে হারিয়েছে গত ১৫ বছরের।

ছাত্র-জনতার বিপ্লবী কয়েক হাজার ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এই আন্দোলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ ১১ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।

অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম প্রমুখ।

এএইচআর/এসএম