জামায়াতে ইসলামী ও ১২ দলীয় জোটের মধ্যে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে দলীয় কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

সভায় দেশের আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, গণহত্যার বিচার, পাচারকৃত টাকা ফেরত আনা, আইনের শাসন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জনগণের ঐক্য সুদৃঢ় করতে হবে। ছাত্র-জনতার সঙ্গে একাকার হয়ে যেকোনো ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত আমরা মোকাবিলা করব।

তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট দীর্ঘ সাড়ে পনেরো বছর ধরে জাতির ঘাড়ে চেপে বসা স্বৈরশাসকের অবসান ঘটেছে। এ দিনটিকে বলা হচ্ছে দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস। এজন্য তরুণসমাজকে কৃতজ্ঞতা জানাই।

জামায়াত আমির বলেন, হাজার প্রাণের বিনিময়ে আমরা এই দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি। দেশ গড়ার কাজে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ ১২ দলীয় জোট, আলেম সমাজের কী ভূমিকা হওয়া উচিত সে সম্পর্কে আমরা আলোচনা করেছি। আমাদের এ আলোচনা অব্যাহত থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি জনগণের ঐক্য সুদৃঢ় হবে এবং ছাত্র-জনতার সঙ্গে একাকার হয়ে যেকোনো ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত আমরা মোকাবিলা করব।

১২ দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, জাতির এক ক্রান্তিকাল যুগসন্ধিক্ষণে আমরা জামায়াতে ইসলামীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাদের দপ্তরে এসে মতবিনিময় করেছি। জাতীয় জীবনে বিরাজমান সংকটে একটি ধাপ আমরা অতিক্রম করেছি কিন্তু বাকি রয়ে গেছে আরও অনেক সমস্যা। এ সংকট মোকাবিলা করার জন্য আগামী দিনে একসঙ্গে আমরা কীভাবে অগ্রসর হতে পারি সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি।

মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের পর দেশকে অর্থবহ স্থিতিশীল ও উন্নয়নের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বৈষম্যহীন, সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির সমাজ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের কর্তা ব্যক্তিগণ, দলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দেশে যে নৈরাজ্যকর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। 

‘দেশের প্রতিটি সেক্টরে আইনের শাসন, সব মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বিগত সরকারের অপকর্মের মদদদাতা কর্মকর্তাদের অপসারণ করে সৎ, দক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে। ফ্যাসিবাদীদের লুটপাট করা বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনার ব্যবস্থা করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে।’

তারা বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন যথাযথ অনুসন্ধান করে প্রকৃত সংখ্যা জাতির সামনে তুলে ধরা এবং নিহতদের পরিবারবর্গকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

‘অন্তর্বর্তী সরকার দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের এ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করার জন্য ফ্যাসিবাদের দোসররা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের এই বিজয়কে দুষ্কৃতকারীরা যেন নস্যাৎ করতে না পারে এজন্য দেশবাসীকে সোচ্চার থাকতে হবে এবং কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের ঐক্যকে আরও দৃঢ়তর এবং মজবুত করতে হবে। আমরা একটা ষড়যন্ত্রের মধ্যে সময় অতিবাহিত করছি।’

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ও মাওলানা আ.ন.ম শামসুল ইসলাম (সাবেক এমপি), সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব আব্দুর রব।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ১২ দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সাবেক এমপি আহসান হাবিব লিংকন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির (একাংশ) চেয়ারম্যান মঈন মোহাম্মদ ফারুক, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুর রাকিব, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুল করিম, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, পিএনপির চেয়ারম্যান ফিরোজ মোহাম্মদ লিটন, নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি মাস্টার এম এ মান্নান, এলডিপির সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম রনক, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আবু হানিফ।

জেইউ/এমএ