অন্তর্বর্তী সরকারকে কতদিন সময় দিতে চায় রাজনৈতিক দলগুলো?
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে বসেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
সোমবার (১২ আগস্ট) বিকেল চারটায় বিএনপিকে দিয়ে এই আলোচনার পর্ব শুরু করেছেন প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বিজ্ঞাপন
তার সরকারি বাসভবন যমুনায় এই বৈঠকে অংশ নিতে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাউদ্দিন আহমেদ, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান।
বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা হয়নি।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমরা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কী কী করা যায়, সে বিষয়ে আমরা মতামত দিয়েছি। তারা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন কী করতে যাচ্ছেন। এখন মনে করি, সরকারকে সহায়তা করা প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের একমাত্র কর্তব্য।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা একটা কথা খুব স্পষ্ট করে বলেছি, তথাকথিত মাইনরিটির ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের যে গল্প পাতা হয়েছে, সে গল্পটা পুরোপুরিভাবে উদ্দেশ্যমূলক। বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করা, এই সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করা, ছাত্রজনতার আন্দোলনকে একেবারে নস্যাৎ করে দেওয়ার আরেকটি চক্রান্ত।
তিনি বলেন, খুবই দুর্ভাগ্যজনক... এত হত্যা, এত নির্যাতন, এত শিশুদের হত্যা করার পরও সেই দলটি আবারও বিভিন্নরকম কথা বলছে, যা বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে। আমরা মনে করি এই সরকারের এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি সরকার অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবে, অবশ্যই কোনো হত্যাকারীর সঙ্গে নয়। যারা ছাত্রকে হত্যা করেছে, যারা শিশুকে হত্যা করেছে, যারা রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে জনগণ আছে। এই ব্যাপারে সরকার ব্যবস্থা নিতে গেলে অবশ্যই সহযোগিতা করা হবে।
এদিন বিকেল সাড়ে ৪টার পর জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে দলটির নেতৃবৃন্দ যুমনায় প্রবেশ করেন। সেখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি। উনারা কেবল বসলেন, মাত্র চারটা দিন হলো, আমরা দেখতে চাই উনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) কীভাবে জাতিকে নিয়ে এগোতে চাচ্ছেন। সমস্যাগুলোর সমাধান কীভাবে করেন। যৌক্তিক সময়ে সমাধান হবে বলে আমরা আশাবাদী।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন জাতির জীবনে একটা টার্নিং পয়েন্ট চলছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার দাওয়াতে এখানে এসেছিলাম। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এখন করণীয় কী, সেই বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশ আমাদের সবার। দেশ ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকব। আমরা যদি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করি সবাইকে সহযোগী করি, এখন যারা দায়িত্বে এসেছেন তাদেরকে সহযোগিতা করি; তাহলে দেশ একটা শৃঙ্খলা ও সুন্দরের মধ্যে আসবে বলে আমরা মনে করি।
জামায়াতের আমির বলেন, আন্দোলনে যারা শাহাদাত বরণ করেছেন তাদের জন্য দোয়া করেছি। যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতি সহানুভূতি ও সুস্থতা কামনা করেছি। দেশের বিভিন্ন ভালো-মন্দ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।
বিএনপি-জামায়াতের পর এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, গণঅধিকার পরিষদ (একাংশ) এবং সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপর সাড়ে সাতটায় সিপিবি ও বাসদের সঙ্গে বসবেন তিনি।
আরও পড়ুন
বৈঠকের আগে বিএনপি নেতারা জানান, দলের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অভিনন্দন জানানো হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা, দেশের অর্থনীতির অগ্রগতি নিয়ে এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলের মতামত তুলে ধরবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, বিএনপি নতুন সরকারকে অন্তত এক বছর সময় দিতে চায়। ইতোমধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করলেও আসলে এক বছর সময় মেনে নেবে বিএনপি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যমুনায় প্রবেশের সময় সেলিমা রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, এসেছি। এখানে অনেক বিষয়ে আলোচনা হবে। আমাদের কাছে কোনও পরামর্শ চাইলে তো দেব। আসলে এটা একটা সৌজন্য সাক্ষাৎ।’
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘আমরা ছাত্রজনতার বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ চাই। তারা যে আহ্বানে এই পরিবর্তন এনেছে, সেই বৈষম্যের অবসান চাই। গত ১৫ বছরে দেশে যে ফ্যাসিবাদী শাসন চলেছে, তা যেন ফিরে না আসে সে ব্যবস্থা করতে হবে।’
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে আমার সৌজন্যমূলক কথা বলব। নতুন সরকার চাইলে পরামর্শ দেব।’
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হয়। সেদিন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ ১৩ জন উপদেষ্টা শপথ নিয়েছিলেন।
তারপর গত রোববার আরও দুই উপদেষ্টা শপথ নেন। ১৬ উপদেষ্টার মধ্যে ফারুক-ই-আজম যুক্তরাষ্ট্রে থাকার কারণে শপথ নিতে পারেননি। তিনি গতকাল রোববার রাতে দেশে পৌঁছেছেন। আগামীকাল মঙ্গলবার তার শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে।
এএইচআর/এমজে