বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেছেন, বাংলাদেশের আপামর ছাত্র-জনতা অসাধ্য সাধন করেছেন। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছেন। অভূতপূর্ব এক জনবিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। গত ১৬ বছরের প্রচন্ড বাড়াবাড়ির কারণে দেশের ছাত্র-জনতার মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, এ জনবিস্ফোরণ তারই বহিঃপ্রকাশ। এ গণঅভ্যুত্থান আবারও প্রমাণ করল যে জনগণের শক্তির কাছে কোনো স্বৈরশাসকই টিকে থাকতে পারে না।

তিনি বলেন, দেশ আজ রাহুমুক্ত হয়েছে। শত শত ছাত্র-জনতার প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ আজ আবার নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আমাদের ছাত্র-জনতাসহ চট্টগ্রামবাসীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বিকেলে কাজীর দেউরী নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ের মাঠে থানা ও ওয়ার্ড বিএনপির নেতাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মাহবুবের রহমান শামীম।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।

এসময় মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, এ দেশ আমাদের সবার। ইতোমধ্যে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনার জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ খুবই প্রয়োজন। এখন সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয় এমন কোনো কাজ কাউকে করতে দেওয়া যাবে না। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেন, আজ ছাত্র-জনতার গণবিস্ফোরণের কারণে আমাদের বিজয় অর্জিত হয়েছে। সেই বিজয়কে দীর্ঘায়িত করার জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় সামাজিক নিরাপত্তাবলয় তৈরি করতে হবে। আমাদের পাশে যারা সংখ্যালঘু রয়েছেন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশটা আমাদের সবার। এ দেশ আমাদেরই গড়তে হবে। কেউ যেন কোনো নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার না হন। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ গণমাধ্যমকর্মীর ওপর যেকোনো ধরনের আঘাত প্রতিরোধ করতে হবে। যেকোনো অপপ্রচার ও অপচেষ্টার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামবাসীকে সচেতন থাকতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে এরশাদ উল্লাহ বলেন, পরাজিত শত্রুরা একদিনে নিমেষেই শেষ হয়ে যায় না। তারা যখন দেখেছে, তাদের প্রাথমিক পরাজয় হয়েছে, তখন তারা বিষদাঁত বসিয়ে দিতে চাইবে। আমাদের আশপাশে যে সংখ্যালঘু ভাইবোনেরা রয়েছে, তাদের আঘাত করার মাধ্যমে ও গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে। আমাদের গণমাধ্যমকর্মী, আমাদের অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে আঘাত করতে চাইবে, আগুন দিতে চাইবে। আমাদের সবার নিজেদের জায়গা থেকে সচেতন থাকতে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নতুন অন্তবর্তীকালীন সরকার সব অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। নতুন সরকারের কাছে আমাদের সব নেতাকর্মীর মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।

নাজিমুর রহমান বলেন, আমরা যে বিশাল অর্জনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছি, সেই অর্জন যেন প্রোপাগান্ডা দিয়ে, উদ্দেশ্যমূলক কিছু ঘটনা দিয়ে যেন ভূলুণ্ঠিত করতে না পারে। ছাত্র-জনতা রাজপথে থেকে যেভাবে সবকিছু প্রতিরোধ করেছে, তেমনি এ অপচেষ্টাগুলোও প্রতিরোধ করতে হবে। তাহলে আমরা আসল উদ্দেশ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারব। কাউকে কোনো ধরনের হটকারী কাজ করতে দেওয়া যাবে না। এসময় বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও চট্টগ্রামবাসীকে শান্ত থাকতে হবে।

এতে বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপি নেতা এম এ আজিজ, সৈয়দ আজম উদ্দিন, এস কে খোদা তোতন, হারুন জামান, অধ্যাপক নুরুল আলম রাজু, ইকবাল চৌধুরী, এস এম আবুল ফয়েজ, কাজী বেলাল উদ্দিন, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আবদুল মান্নান, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, আবুল হাশেম, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলম, মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক নুরুল হক, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবদুল আজিজসহ মহানগর বিএনপির সাবেক নেতারা, থানা ও ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা।

আরএমএন/এসএসএইচ