গরুর মাংস, মাছ-ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি দ্রব্যের দামের আগুনে যেন হাত পুড়ছে মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের। তবে ব্রয়লার মুরগির মাংসের দাম কমে আসায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে জনমনে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭৫ টাকা, যা গত সপ্তাহেও ছিল ২৩০-২৪০ টাকা পর্যন্ত।

শুক্রবার (২ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

মাংসের বাজার ঘুরে দেখা যায়, অপরিবর্তিত দামে গরু ও খাসির মাংস বিক্রি হলেও ব্রয়লার মুরগির কেজিতে অন্তত ৪০ টাকা ও সোনালি মুরগির কেজিতে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০-৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকা। প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৬৫-১৭৫ ও সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৯০ টাকার মধ্যে।

এদিকে মাছের বাজার ঘুরে তেমন কোনো স্বস্তির খবর পাওয়া যায়নি। আগের মতো চড়া দামে প্রতি কেজি পাঙাশ ২০০-২২০, তেলাপিয়া ২০০-২৫০, চাষের কৈ ২৫০-২৭০, ছোট রুই ২৫০-২৬০, কার্প জাতীয় মাছ ৩০০, চাষের শিং ৪৫০-৬০০, সাগরের পোয়া ৪০০-৬৫০ ও বাইলা মাছ বিক্রি হচ্ছিল ৬৫০-৭০০ টাকায়।

সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সব ধরনের পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। বাজারে খাদ্যপণ্যের দামও কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছিল। যদিও কারফিউ জারি ও সেনাবাহিনী নামানোর পর পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কিছুটা স্বাভাবিক মনে হলেও এখনো মানুষের মনে আতঙ্ক কাটেনি। পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজারে আগের থমথমে পরিস্থিতির রেশ আছে। বাজারে মানুষ কম আসছে। তাতে বিক্রি কমেছে। তবে তুলনামূলক পণ্যের সরবরাহ বাড়ায় জিনিসপত্রের দাম কিছুটা কমেছে।

মধ্যবাড্ডা এলাকার গরুর মাংস বিক্রেতা শান্ত ইসলাম বলেন, এই সময়ে গরুর মাংসের চাহিদা ভালোই থাকে। যে কারণে দামটা মোটামুটি ৮০০ টাকার মধ্যেই আটকে থাকে। আজকের বাজারে গুরুর মাংস বিক্রি করছি ৭৮০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকা। কলিজা বিক্রি করছি ৭৮০ টাকা করেই। এছাড়াও গরুর পায়া ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত জোড়া।

এদিকে মুরগির মাংস বিক্রেতা মনসুর আলী বলেন, গত কয়েকদিনে ব্রয়লার মুরগির দামটাও একটু কম। ১৭০ টাকা কেজি সর্বশেষ মাসখানেক আগে ছিল, এরপর আবার দামটা বেড়ে যায়। গত সপ্তাহেও ২০০ টাকার বেশি ছিল, আজ ১৭০ করে বিক্রি করছি।

তিনি বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মাংসের চাহিদাটা একটু বেড়ে যায়, বাজারে যদি সেই পরিমাণে সরবরাহ না থাকে, তাহলেই দাম বেড়ে যায়, যেখানে আমাদের কিছুই করার থাকে না। তবে আশা করছি এখন মোটামুটি ১৭০-১৮০ টাকার মধ্যেই থাকবে।

সাব্বির আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যারা মেসে থেকে পড়াশোনা করি, আমাদেরকে অনেকটাই মুরগির মাংসের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। কিছুদিন আগে দামটা বেড়ে গিয়েছিল, আমরাও একটু অস্বস্তিতে ছিলাম। এখন দেখছি আবার দামটা কমেছে। কিন্তু মাছের দামটা ঠিকই আবার বেড়েছে।

বাজার করতে আসা মোহাম্মদ আল আমিন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বাজারে প্রায় প্রতিটি পণ্যেরই দাম ঊর্ধ্বমুখী। যে কারণে মাসের খাবার খরচ বেড়েছে প্রায় অর্ধেক। কিন্তু আমাদের আয় তো বাড়েনি। ২টা টিউশনি করিয়ে আগে যা পেতাম, এখনও তাই পাই। কিন্তু যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে, তাতে আমাদের মতো মানুষের কিছুই কিনে খাবার উপায় নেই।

টিআই/এমএ