আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কতিপয় ওয়ার্ডের নেতাদের সমন্বয় সভায় হট্টগোল হয়েছে। কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে সহিংসতা প্রতিরোধে 'কে মাঠে ছিল, আর কে মাঠে ছিল না' সেগুলো নিয়েই সভায় উচ্চবাক্য ও 'চিল্লাচিল্লি'র ঘটনা ঘটে বলে সভা সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল  হক, সুজিত রায় নন্দী ও কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী প্রমুখ। 

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের আয়োজিত সমন্বয় সভায় ঢাকা ১১, ১৪, ১৫, ১৬ আসনের দলীয় সংসদ সদস্য, এসব এলাকার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। 

সভার সূত্র মতে, সমন্বয় সভায় বিভিন্ন আসনের সংসদ সদস্য, থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরা বক্তব্য রাখেন। নেতারা যখন বক্তব্য দেন, কর্মীরা তখন হট্টগোল শুরু করেন। 

হট্টগোলের কারণ জানতে চাইলে একাধিক সূত্র বলেন, কোটা আন্দোলনের সময় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে দুষ্কৃতকারীরা সহিংসতা চালায়। এ সময় হাইকমান্ডের নির্দেশে যারা প্রতিরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেননি, তারা যখন নিজের অবস্থান তুলে ধরে জাহির করেন, তখন সেই এলাকার নেতারাই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন। নেতাকর্মীদের হট্টগোল দেখে অনেক নেতাকেই বক্তব্য থেকে বসিয়ে দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। 

জানা গেছে, পল্লবী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন, মিরপুর ৯৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমির উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন নেতা যখন বক্তব্য দিতে গিয়ে নিজের মাঠে থাকার কথা বলেন, তখন উপস্থিত অনেকে প্রতিবাদ করেন। নেতাকর্মীদের হট্টগোলের কারণে বক্তব্য থেকে তাদের বসিয়ে দেওয়া হয়।

আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, মিরপুরের সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা দেশের বাইরে অবস্থান করেছিলেন। তিনি দেশে না থাকলেও তার পক্ষে সেই এলাকার এক কাউন্সিলর গুণগান করতে শুরু করেন। তখন নেতাকর্মীরা হট্টগোল শুরু করেন। বলতে থাকেন যে, তিনি (ইলিয়াস মোল্লা) তো দেশেই নেই। তার আবার অবস্থান কী?

এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নেতাদের কাছ থেকে বিবরণ শুনতে কয়েকজনকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু বক্তব্য দিতে এসে অনেকে নিজের গুনগান গাইতে শুরু করেন। আবার অনেকে মাঠে ছিলেন না, তাদের বক্তব্য দিতে দেখে অনেকে উত্তেজিত হয়ে যান। তখন তাদের আমরা বসিয়ে দেই। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, যখন যাকে বক্তব্য দিকে দেই, তখন সে তার নিজেরটা বলেন। মাইক ধরলে সবাই তার বীরত্বের কথা বলেন। আবার দুই-চার জনের নাম বলেন, পাঁচ-সাত জনের নাম বলা হয় না। তখন পাঁচ-সাত জন একটু ক্ষেপে যান। তখন অন্যরা বলে আমরাও তো ছিলাম।

তিনি বলেন, কোনো থানার সভাপতি, কোনো ওয়ার্ডের সভাপতি ও কোনো ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বক্তব্য দিয়েছেন। 

এর আগে, সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, নাশকতাকারীরা এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে। তারা আরো খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। 

তিনি বলেন, শান্তিপু্র্ণ পথে নয়, চোরাগোপ্তা পথে তাণ্ডবলীলা চালিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চায় বিএনপি-জামায়াত। তারা নির্বাচন চায় না, গণতন্ত্র চায় না। তাদের পথ শান্তিপূর্ণ নয়, তাদের পথ দেশকে অস্থিতিশীল করে রক্তস্রোতের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতা দখল। এটাই তাদের মূল লক্ষ্য।

এমএসআই/কেএ