ফাইল ছবি

কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কোনো জায়গায় রুখে দাঁড়াতে পারেননি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। দলের হাইকমান্ডের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেছেন, সহিংসতার সময় নেতাকর্মীদের মাঠে রাখতে না পারাটাই দলীয় সাংগঠনিক ব্যর্থতা। 

আবার, নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে যেসব নেতাকর্মীকে মাঠে দেখা যায়নি তাদের তালিকা তৈরি করার জন্য কেন্দ্রীয় নেতারা দাবি করেছেন বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) বিকেলে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ’র আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে এমন ক্ষোভ ও দাবি জানানো হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।  

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, শুরুতেই বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, কোটা আন্দোলনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ব্যর্থতা প্রকাশ পেয়েছে। ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী থাকার পরও রুখে দাঁড়াতে পারেনি, এটা সাংগঠনিক দুর্বলতা। ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি না থাকায়ও অসন্তুষ্ঠি প্রকাশ করেছেন।

বৈঠক সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সব সংগঠনকে স্ব স্ব সংগঠন সমন্বয় মিটিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভ দূর করে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেছেন, সতর্ক থাকতে হবে। কারফিউ মেনে চলতে হবে। সরকারি বিধিবিধান মেনে চলতে হবে। মানুষের পাশে থাকতে হবে। গরিব মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করতে হবে। নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নিজ সংগঠনের সমালোচনা করে সাংগঠনিক দুর্বলতা বের করতে হবে। চলমান পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
  
সূত্রে আরো জানা গেছে, কারফিউ না থাকলে দলের নেতাকর্মীদের ডেকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে আর কেউ সহিংসতা করতে না পারে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার নিদের্শ দিয়েছেন। এছাড়া সংগঠনে বহিরাগতদের চিহ্নিত করার নিদের্শনা দেওয়া হয় বৈঠকে।

‘ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সব নেতাকর্মীদের অবস্থান করার আহ্বান জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, উত্তরার দিকে গ্রুপিং রাজনীতি চলছে, যাত্রাবাড়ীর দিকে গ্রুপিং রাজনীতি চলছে, যে কারণে সেখানে কেউ রুখে দাঁড়াতে পারেনি। গ্রুপিং রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। দলের মধ্যে যে কোন্দল রয়েছে তা মিটিয়ে ফেলতে হবে।’

বৈঠকের বার্তা কী ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেছেন, আমরা খুব আরামের মধ্যে ছিলাম, এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে, এগুলো নিয়ে আমরা মাথা ঘামাইনি। আমাদের সতর্ক হতে হবে। এ রকম পরিস্থিতি আরো হতে পারে। চেষ্টা করতে পারে। আমরা যেন সতর্ক থাকি। আমরা যেন সংগঠনকে শক্তিশালী রাখি।

তিনি আরো বলেন, খাদ্য নিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। আমরা রান্না করা খাদ্য সরবরাহ করছি। করোনার সময় যেমন সহায়তা করা হয়, এখনও সহায়তা করতে বলা হয়েছে। সংগঠনে বহিরাগত যারা আছে তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখার বিষয়েও বলা হয়েছে।

এমএসআই/জেডএস