সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল এবং ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের যৌক্তিক দাবিগুলোকে সমর্থন করেছে ইসলামী যুব আন্দোলন।

ছাত্র সংগঠনটি বলছে, কোটা কখনোই স্থায়ী হয় না, অন্তত চার-পাঁচ বছর পরপর সংস্কার হওয়া দরকার। কয়েক বছর পরপর দেখতে হয়, কোটা কতটা কার্যকর আছে। আর এই সংরক্ষিত কোটা সবসময় মেধার মূল্যায়নে অর্ধেকের কম হওয়া উচিত, কোটা ৫০ শতাংশের বেশি সংবিধানসম্মত নয়।

আজ মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলন বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে এসব মন্তব্য করেন ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আতিকুর রহমান মুজাহিদ ও সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি মানসুর আহমদ সাকী।

ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের প্রচার সম্পাদক আবু বকর সিদ্দীক প্রেরিত এই বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ হয়। কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তখন সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) কোটা পুরোপুরি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত।

যার ফলে বর্তমানে সরকারি চাকরির নিয়োগে কোটার বিন্যাস হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ (ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনি), নারী ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে। এর বাইরে বাকি ৪৫ শতাংশ সাধারণদের জন্য বরাদ্দ।

কিন্তু কোনও পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে কোটা ব্যবস্থার এ বিভাজন হয়নি। শুধু তাই নয়, কোটায় প্রার্থী না থাকলেও কোটার বাইরে শূন্যপদে কাউকে নিয়োগ দেওয়াও হয়নি। উল্টো অবৈধ সুযোগ নিয়ে অমুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি দেওয়ার অভিযোগও এসেছে বহুবার। তাই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধার পরিবার যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল এসকল ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে বৈজ্ঞানিকভাবে ঢেলে সাজানো উচিত। 

নেতৃদ্বয় আরও বলেন, সরকারের কাজ সংকট নিরসন করা কিন্তু দুর্ভাগ্য, এ দেশের সরকার নিত্যনতুন সংকট সৃষ্টি করেই চলছে। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তারা জনস্বার্থের কথা মাথায় রাখে না, ক্ষমতার জোরে যাচ্ছেতাই সিদ্ধান্ত গেলানোর চেষ্টা করে। এগুলোর পরিণতি ভালো হয় না।

সুতরাং সরকারের কাছে আমাদের দাবি, আন্দোলনকারী ও দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ কোটা ক্যাটাগরি নির্ধারণ করুন। অন্যথায় এই আন্দোলন সরকারের পতন বয়ে আনতে পারে। ইসলামী যুব আন্দোলন সকল ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে।

জেইউ/এনএফ