যেকোনো পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি কখনোই মঙ্গল বয়ে আনে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।

তিনি বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যুতে স্বাধীনতার চেতনার নামে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠন ধ্বংস করা হচ্ছে।

বুধবার (৩ জুলাই) সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

জিএম কাদের বলেন, এ কথা যেন আমরা ভুলে না যাই যে, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এদেশের মানুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আন্দোলনে জয়লাভের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। স্বাধীনতাযুদ্ধে আমাদের মূল অর্জন সংবিধান, সেখানে সুযোগ-সুবিধাদির ক্ষেত্রে সাম্যের কথা বলা হয়েছে। আমাদের শহীদ মিনার বৈষম্য থেকে মুক্তি সংগ্রামে আত্মত্যাগের প্রতীক।

তিনি বলেন, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। যেখানে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য, ১ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত। বাকি ৪৪ শতাংশ মেধায় নিয়োগ দেওয়া হতো।

সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ২০২১ সালে সেই পরিপত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। ২০২৪ সালের ৫ জুন রিটের রায় প্রকাশ করেন আদালত। সেখানে মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত অংশটির বাতিলকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করেন আদালত। ফলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চাকরিপ্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে পুনরায় মাঠে নামে।

জিএম কাদের বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে বাজেটে যে বরাদ্দ রাখা হয় তার সিংহভাগ ব্যয় হয় অবকাঠামো উন্নয়নে। শিক্ষার উন্নতি মানে শিক্ষার মানের উন্নতি। যে কারণে অবকাঠামো ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হয়। শিক্ষার উন্নয়ন বা মানুষকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার মূল কারিগর হল শিক্ষক। ফলে অবকাঠামোর চেয়েও মানসম্মত শিক্ষক নেওয়া ও তৈরি করা আবশ্যক মনে করি।

তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সব ক্ষেত্রেই মানসম্মত শিক্ষকের অভাব। তার কারণ, প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষকতা পেশায় খুব ভালো ছাত্রদের আকর্ষণ করার মতো সুযোগ-সুবিধা নেই। মেধারী ছাত্ররা শিক্ষকতা পেশায় এলেও সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় পরবর্তীসময়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদার ব্যবস্থা থাকলে এমনটি হতো না।

এমএইচএন/পিএইচ