দেশ, ইসলাম ও মানবতা ধ্বংসের সকল আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।

তিনি বলেন, দেশ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে, ডামি সরকারের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। সরকার ভারতের প্রেসক্রিপশনে জনগণের বাক-স্বাধীনতা হরণ করে তাদের ওপর জুলুম নির্যাতন চালাচ্ছে। সরকার জালিম শাহীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সকালে রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে থানা প্রতিনিধি সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সরকারকে মনে রাখতে হবে, ইতিহাসের সবচেয়ে পরাশক্তি নমরুদ, ফেরাউন, শাদ্দাদ, কারুণকেও জনগণের আন্দোলনে ভয়াবহ পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। ইতিহাসে দেখা যায় অনেক ঐক্যবদ্ধ ছোট শক্তির কাছেও বড় ও পরাশক্তির পরাজয় হয়েছে। এজন্য দেশপ্রেমিক ঈমানদার জনতা ঐক্যবদ্ধ হলে ভারত ও আমেরিকার মতো পরাশক্তিও টিকবে না।

পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার সংবাদ সম্মেলনে যেভাবে ইউরোপের মধ্যে “ফ্রি যাতায়াতের” উদাহরণ দিয়েছেন, সেটা তো কোনোভাবেই ভারত-বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। সেখানে যাতায়াত হয় সমমর্যাদার দুটি দেশের মধ্যে; সেখানে এক দেশ আরেক দেশকে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রাখে না। এক দেশের বাহিনী সেই কাঁটাতার পেরিয়ে এসে আরেক দেশের নাগরিকদের গুলি করে মারেও না।

ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, নয়াদিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কী ধরনের বোঝাপড়া, সম্মতি বা চুক্তি করেছেন, সেগুলো প্রকাশ করতে হবে। দেশের সংবিধান অনুসারে অন্য দেশের সঙ্গে এ ধরনের কোনো চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক করতে হলে তা দেশবাসীর কাছে প্রকাশ করা জরুরি; কিন্তু দেখা যাচ্ছে জনগণকে আড়ালে রেখেই এ ধরনের চুক্তিগুলো করা হয়। জাতিকে অন্ধকারে রেখে অন্ধকারে রেখে দেশের স্বার্থ বিরোধী কোনো চুক্তি জনগণ মানবে না।

তিনি বলেন, সরকারি আমলা, প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা দুর্নীতি ও লুটপাটে জড়িয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের রেললাইন ও ভারতের মুদ্রানীতি চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশকে শোষণ করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। ভারত তাদের নিজেদের সুবিধার জন্য বাংলাদেশের সড়কপথ এবং রেলপথ ব্যবহার করবে। তথ্য হ্যাকিং ও অতিরিক্ত অর্থ আত্মসাতের জন্য বাংলাদেশের ইন্টারনেট সেবা ভারত নিয়ন্ত্রণ করার ষড়যন্ত্র করছে। বাংলাদেশের স্থলবন্দরগুলো বিনা শুল্কে ব্যবহার করতে চায়।

মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, আমাদের দেশ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ইউরোপের কোনো সীমানা নেই। এ কথা দেশকে গোলামির জিঞ্জিরে আবদ্ধ করে অশুভ ইঙ্গিত। ভারত আমাদের সবকিছু দিয়ে দিয়েছে, অথচ নেপালের জন্য আমাদের মাত্র ১৮ কিমি ট্রানজিট ভারত দিচ্ছে না। ভারতের জন্য পদ্মাসেতু করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ভারতের শুধু দালাল নয়, ভারতেরই সরকার। ভারতের স্বার্থে যা ইচ্ছা তাই করছে। সেন্ট মার্টিন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে।

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, বাংলাদেশের প্রতি ভারতের আচরণ অঙ্গরাজ্যের মতো। মোদি শেখ হাসিনাকে মুখ্যমন্ত্রীর মূল্যায়ন করছেন। শেখ হাসিনা ভারতকে শুধু দিয়েই যাচ্ছেন, কিছু নিতে পারেননি। দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের ব্যাংকগুলোকে খালি করে দেওয়া হয়েছে। আমলারা সরাসরি দুর্নীতিতে জড়িত। সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই বেনজীর, মতিউর, আজিজরা সৃষ্টি হয়েছে।

তিন দফা কর্মসূচি ঘোষণা

সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সংগঠিত দেশ বিরোধী সকল চুক্তি বাতিল এবং চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আগামীকাল শুক্রবার (২৮ জুন) বাদ জুমআ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইটে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল, ৩ জুলাই চলমান পরিস্থিতিতে জাতীয় সংলাপ ও ৫ জুলাই (শুক্রবার) সকল জেলা/মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।

থানা প্রতিনিধি সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, আলহাজ খন্দকার গোলাম মাওলা, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, কেএম আতিকুর রহমান, জান্নাতুল ইসলাম।

কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম ও দপ্তর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত থানা প্রতিনিধি সম্মেলনে জেলা, মহানগর ও থানা নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

জেইউ/এসকেডি