ক্ষমতায় থাকতে ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তি করা হয়েছে
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে মোদি সরকারের সঙ্গে ১০ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) গণমাধ্যমে এ বিবৃতি পাঠানো হয়। বিবৃতির বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন হেফাজতের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস।
বিজ্ঞাপন
বিবৃতিতে শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, মোদি সরকারের সঙ্গে দেশবিরোধী কোনো চুক্তি বা সমঝোতা এ দেশের জনগণ মেনে নেবে না। দেশের স্বার্থ না দেখে ভারতের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া বন্ধুত্ব নয়, বরং দাসত্বের শামিল। অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য এমন দাসত্বের নজির আমরা অতীতেও দেখেছি। কিন্তু দাসত্বের পরিণতি কখনো সম্মানজনক হয় না। ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিক। অথচ ভারতকে রেল-ট্রানজিট দেওয়ার ব্যাপারে দেশের সার্বভৌমত্বের অধিকারী জনগণের সম্মতি আছে কি না তা দেখা হয়নি। আমাদের বুকের ওপর দিয়ে ভারতের রেল আসা-যাওয়া করবে, কিন্তু এর বিনিময়ে ভারতের সঙ্গে তিস্তাচুক্তি করতেও ব্যর্থ হয়েছে সরকার। রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের যেকোনো চুক্তি বা সমঝোতা হতে হয় পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে। একতরফা স্বার্থের চুক্তি কোনোভাবেই সমমর্যাদা রক্ষা করে না।
আরও পড়ুন
মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, অন্যায্য বাঁধ বসিয়ে ভারত তিস্তাসহ আন্তর্জাতিক অভিন্ন নদীগুলোর পানি একতরফাভাবে ভোগ করছে। আমাদের প্রাপ্যটুকু তারা দিচ্ছে না। আমাদের নদীগুলো শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। এখানকার কৃষক ও বাসিন্দারা নিদারুণ কষ্টে ভুগছেন। আবার ভারি বৃষ্টিপাতের সময় ব্যারেজ খুলে দিয়ে ভারত উজানের পানিতে আমাদের বন্যায় ডুবিয়ে মারে। টিপাইমুখ ও ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে আমাদের নদী ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে ভারত। আমাদের দুর্বল নতজানু পররাষ্ট্রনীতির সুযোগে ভারত নদীর পানি প্রত্যাহার ইস্যুগুলো বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রেখেছে। অথচ জনগণের আপত্তি উপেক্ষা করে আমাদের ফেনী নদীর পানি ভারতকে ভোগ করার সুযোগ দেওয়া হলো।
হেফাজত আমির আরও বলেন, তথাকথিত বন্ধুত্বের নামে আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে ভারতের সুবিধাই শুধু দেখা হচ্ছে। কিন্তু প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে আমরাও তো অনেক অসুবিধায় আছি। আমাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো তো ভারত অনুভব করে না। সীমান্তহত্যা বন্ধে ভারতের কোনো বাস্তব পদক্ষেপ দেখা যায় না। কীসের স্বার্থে ভারতকে সারাজীবন মনে রাখার মতো সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তা দেশের মানুষ বোঝে। একদলীয় ফ্যাসিস্ট শাসন আজ জাতির জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশকে দখলে নেওয়ার ভারতীয় ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার পর ২০২১ সালে মুসলিমবিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক মোদি সরকারের নির্দেশে বিনা কারণে শত শত হেফাজত নেতাকর্মী ও দেশপ্রেমিক আলেম-ওলামাকে গ্রেপ্তার করে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। ভারত আমাদের ধর্ম-সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, আইন-আদালত, আমলা, রাজনীতি সবক্ষেত্রে দখলবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। কওমি মাদ্রাসা ধ্বংসের বহুমুখী চক্রান্ত করছে। এবার দেশ বিকিয়ে দেওয়ার চুক্তি করা হয়েছে। জন্মভূমির মায়া থাকলে কোনো নাগরিক এসব গোলামি চুক্তি মেনে নিতে পারে না।
মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, হেফাজতে ইসলামের কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ নেই। কিন্তু দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত আসলে, ইসলামী চেতনা আক্রান্ত হলে হেফাজত নেতাকর্মী ও দেশপ্রেমিক আলেম সমাজ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারে না।
এমআর/এসএসএইচ