এসএম কামাল হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ (রোববার)। দলটির প্লাটিনাম জয়ন্তীতে বিভিন্ন বিষয়ে ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত আলাপ করেছেন এসএম কামাল হোসেন।

ঢাকা পোস্ট : আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য হিসেবে দলটির ৭৫ বছরে এসে আপনার অনুভূতি কী?

এসএম কামাল হোসেন : বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগে ৭৫ বছর বয়সে এসে আমি একজন সংসদ সদস্য হয়েছি, এটা আমার বড় প্রাপ্তি। বাংলাদেশের যা অর্জন তা হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। সে দলের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করেছি, সে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে কাজ করতে পারছি, এটা একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার কাছে বিশাল পাওয়া। আমি এই কারণে মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি। আমি বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক করেছেন এবং মহান সংসদে একজন সদস্য হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।

ঢাকা পোস্ট : বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগে কোন পার্থক্য দেখেন কি না?

এসএম কামাল হোসেন : আমি বিন্দুমাত্র কোনো পার্থক্য দেখি না। আওয়ামী লীগের যে নীতি-আদর্শ তা থেকে এক চুল পরিমাণও বঙ্গবন্ধু কন্যা সরে আসেননি। দলের নেতাকর্মীদের কারণেই বিতর্কিত হতে পারে, কিন্তু আওয়ামী লীগের যে লক্ষ্য অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি, মানুষের অন্য, বস্ত্র, বাসস্থান, লেখাপড়া, চিকিৎসা সে লক্ষ্য থেকে আওয়ামী লীগ এক চুলও সরে আসেনি। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের যে লক্ষ্য, সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, সাম্যের বাংলাদেশ সেখান থেকে একবিন্দুও সরে যাননি শেখ হাসিনা।

ঢাকা পোস্ট : ৭৫ বছরের আওয়ামী লীগের সামনে কী চ্যালেঞ্জ আছে?

এসএম কামাল হোসেন : বিশ্বে যে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে, সে সংকটের বাইরে কিন্তু বাংলাদেশ নয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে আমাদের চ্যালেঞ্জ। আমাদের উচিত বঙ্গবন্ধু কন্যার চোখের ভাষা বুজে তিনি যা চান সেভাবে নিজেদের তৈরি করা। সন্ত্রাস, মাদকমুক্ত, জঙ্গিবাদমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি, আমাদের উচিত হচ্ছে তা বাস্তবায়নে নিজেদের প্রস্তুত করা।

ঢাকা পোস্ট : যে আদর্শ নিয়ে আওয়ামী লীগের পথচলা, ৭৫ বছর বয়সে এসে সেই আদর্শ কতটা বিদ্যমান আছে?

এসএম কামাল হোসেন : আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল একটি অসাম্প্রদায়িক স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য। স্বাধীনতার জন্য মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের মাধ্যমে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন। বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশে আবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে রয়েছে। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, শেখ হাসিনা সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছেন। যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ সে লক্ষ্যের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।

‘পাকিস্তান হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু ভেবেছিলেন পাকিস্তান এই বাঙালির কোনো স্বার্থ সংরক্ষণ করবে না। পরবর্তীতে সেটা প্রমাণিত হয়েছে। পাকিস্তানের দুঃশাসন, নির্যাতন, তাদের উপনিবেশ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। মানুষ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করেছে।’

ঢাকা পোস্ট : আওয়ামী লীগের ৭৫ বছর বয়সে সবচেয়ে বড় অর্জন কী?

এসএম কামাল হোসেন : আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করা। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে চেষ্টা করে যাচ্ছে। এগুলো আওয়ামী লীগের অর্জন।

‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আজ পদ্মা সেতু হয়েছে। পদ্মা নদীর উপর দিয়ে ট্রেন চলছে, যা মানুষ কখনো আগে ভাবেনি। কর্ণফুলী টানেল হয়েছে, সমুদ্র বিজয় হয়েছে, সীমান্ত চুক্তি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যারা ২৮ বছর ক্ষমতায় ছিল তারা কেউ সীমান্ত চুক্তি করেনি। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে সীমান্ত চুক্তি হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তি করেছেন। আজকে দেশ স্যাটেলাইটের যুগে প্রবেশ করেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগের অর্জন, শেখ হাসিনার অর্জন, বঙ্গবন্ধুর অর্জন অভিন্ন।’

ঢাকা পোস্ট : অনেকেই বলে থাকেন, আওয়ামী লীগে নেতা আছে কর্মী নেই। এই বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

এসএম কামাল হোসেন : এটা বলার জন্য বলা। আওয়ামী লীগ কর্মী নির্ভরশীল দল। আওয়ামী লীগ তৃণমূল কর্মীদের দল। আওয়ামী লীগ জনগণের দল। শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা ছাড়া ক্ষমতায় থাকা যায় না। সে কারণে জনগণের জবাবদিহিতাই বিশ্বাস করেন। সেটা বিশ্বাস করেন বলেই আজ শেখ হাসিনা বয়স্ক ভাতা দিচ্ছেন, বিধবা ভাতা দিচ্ছেন। যাদের ঘর নাই ঘর দিচ্ছেন, জমি দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা যা স্বপ্ন দেখেন আওয়ামী লীগের নীতি আদর্শের ভিত্তিতে দেখেন।

‘আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের ইসলামের ইশতিহার দিয়েছে, ২০১৮ সালের ইশতিহার দিয়েছে। ২০২৪ সালেও ইশতিহার দিয়েছে। ২১০০ সাল ব-দ্বীপ পরিকল্পনা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। আমাদের ঘোষণাপত্রে যা যা আছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য আজকে কাজ করছেন।’

ঢাকা পোস্ট : দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে জনগণের মধ্যে দলের প্রতি জনপ্রিয়তা কমে, আওয়ামী লীগ টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে সেক্ষেত্রে এখন জনপ্রিয়তা বেড়েছে নাকি কমেছে?

এসএম কামাল হোসেন : আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কমেনি, শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা কমেনি। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা এক ও অভিন্ন। শেখ হাসিনার জনপ্রিয় বৃদ্ধি পাওয়া মানে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়া। কোথাও কোথাও ব্যক্তিগত কারণে আওয়ামী লীগ বিতর্কিত হতে পারে, তা ওই ব্যক্তির প্রতি। কিন্তু তৃণমূল নেতাকর্মীদের শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস আছে। আওয়ামী লীগের প্রতি সাধারণ মানুষেরও আস্থা ও বিশ্বাস আছে।

ঢাকা পোস্ট : তৃণমূলে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক শক্তি পারিবারিক হয়ে গেছে, এটা ৭৫ বছরের আওয়ামী লীগের জন্য কতটা যুক্তিসংগত?

এসএম কামাল হোসেন : ব্যক্তির আচরণ, ব্যক্তির বিনয়ের উপর ভিত্তি করে তৃণমূলের কর্মীরা অনেক ক্ষেত্রে রাজনীতি করে। সেখানে দেখতে হবে ব্যক্তির আচরণটা কী? ব্যক্তির কারণে কী দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না কি ব্যক্তির কারণে নেতাকর্মীরা শান্তি পাচ্ছে। ব্যক্তির কারণে দলে কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। এখানে দুইটায় আছে। কারো কারো কারণে দল শক্তিশালী হচ্ছে আবার কারো কারো কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা হচ্ছে এটা আমি অস্বীকার করি না। দলের ৭৫ বছর বয়সে আমার অনুরোধ হচ্ছে, এখানে আমরা কেউ অপরিহার্য না। এখানে একজনই অপরিহার্য। দেশের জন্য শেখ হাসিনা, দলের জন্যও শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ২৪ ঘণ্টা মানুষের জন্য পরিশ্রম করছেন, আমাদের কাজ হচ্ছে সেটা মানুষের কাছে বলা। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যে কাজ করছেন সেখানে আমাদের সহযোগিতা করা উচিত।

এমএসআই/এমজে