সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন ‘সরকারের কারণেই’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার (২২ মে) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘‘দেখুন কতবড় লজ্জার কথা। সাবেক সেনা প্রধানকে আমেরিকা থেকে স্যাংশন দেওয়া হয়েছে। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক, শেইম।”

‘‘এর জন্য দায়ী কে? এর জন্য (স্যাংশন) দায়ী এই সরকারই, এই শাসকগোষ্ঠী। তারা সেনাবাহিনীকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করার চেষ্টার জন্য এ ঘটনা ঘটেছে। আমরা আগেই বলেছি, এর জন্য দায়ী এই শাসকগোষ্ঠী, এই সরকার। তারাই তাদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেছে। সেজন্য এদের (সরকার) সরিয়ে দেওয়া ছাড়া, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোনো বিকল্প নাই… এটাই একমাত্র পথ।”— বলেন বিএনপি মহাসচিব।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় আজিজ আহমেদকে নিয়ে প্রচার করা প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “অনেকবার বলা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায় থেকে, বিশেষ করে বাইরের মিডিয়া থেকে। কিন্তু সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। শুধু তাই নয়, এখনো যেটা বলছে যে, এটা নাকি রাজনৈতিক কথাবার্তা। এভাবে দেশকে, একটা জাতিকে তার মর্যাদা থেকে ধ্বংস করে দেওয়া, তার সম্মানকে কেড়ে নেওয়া, এটার অধিকার কারও নেই।”

সেনাবাহিনীকে ‘সবচেয়ে ভরসার স্থল’ উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, “সেই সেনাবাহিনীকে যদি সরকারের কারণে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়, সেটা এ দেশের মানুষ কখনোই মেনে নেবে না।”

র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘তারা (সরকার) তো কোনো শিক্ষা নিলেন না। তাদের থেকে একজন পুলিশ বাহিনীর আইজি হয়ে গেলেন। এটার কতটুকু ইমপ্যাক্ট পড়ে, এ ব্যাপারে আমার ধারণা নাই।”

সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে ‘ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছে’ বলেও অভিযোগ এনে বিএনপি নেতা বলেন, “আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের সূচকে যে অবস্থানে গিয়ে পৌঁছেছে, দুর্নীতির ব্যাপারে যে অবস্থানে পৌঁছেছে, সেটা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক, দুঃখজনক। দেশের মাথা নিচু হয়ে আসে।”

গোটা জাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, দেশ পরনির্ভরশীল ও নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে— এমন অভিযোগও আনেন ফখরুল। বলেন, “ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তথাকথিত উন্নয়নের নামে গোটা জাতির ওপর যে ঋণের বোঝা চাপানো হচ্ছে, জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে তাদের ব্যর্থতার কারণে, মানুষ যাবে কোথায়?”

‘উপজেলা ভোট : জনগণের কোনো আগ্রহ নাই’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এই ইলেকশন (উপজেলা) নিয়ে আমি তো জনগণের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখি না। কেউ লক্ষ্যও করছে না কোথাও ইলেকশন হচ্ছে। এটা কোথাও দেখছি না।”

‘‘আপনারা মিডিয়ার কিছু কিছু দেখছি প্রতিদিন এটাকে (উপজেলা নির্বাচন) বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন… ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতেও, প্রিন্ট মিডিয়াতেও। এছাড়া জনগণের কোথাও এটা নিয়ে কথাবার্তা নেই, কোনো আলোচনা নেই। কারণ নির্বাচনী ব্যবস্থাটার ওপরই মানুষের আস্থা চলে গেছে। এই সরকার সেটা করেছে, সাকসেসফুলি করেছে। এই জায়গাগুলো আমাদের রিকভার করতে হবে।”

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের খুব কষ্ট হয় যখন দেখি, কিছু কিছু মিডিয়া আছেন যারা সরকারের সমালোচনা করেন না। হয়ত ভয়ে করেন না অথবা বিভিন্ন কারণে করেন না। কিন্তু বিএনপির সমালোচনা করতে একেবারে সিদ্ধহস্ত। খুঁজে খুঁজে বের করছেন কোথায় কি আছে না আছে।”

‘‘জাতির সামনে সেটা কোনো সমস্যা না, জাতির সামনে সমস্যা এই সরকার, এই শাসকগোষ্ঠী। আমাদের গোটা জাতি আজকে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, গোটা জাতির আত্মা তারা ধ্বংস করে দিয়েছে, এটাকে বিক্রি করে দিয়েছে। পরনির্ভরশীল দেশে নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। আপনারা খুব ভালো করে জানেন, কীভাবে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তথাকথিত উন্নয়নের নামে গোটা জাতির ওপর যে ঋণের বোঝা চাপানো হচ্ছে, জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে তাদের ব্যর্থতার কারণে মানুষ যাবে কোথায়?”

‘নিখোঁজ সংসদের মৃতদেহ : সরকারের সক্ষমতা কোথায়’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আপনারা কি এখনো এই সরকারের সক্ষমতা দেখেন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক নয়, তাদের তথাকথিত একজন সংসদ সদস্য বিদেশি যেয়ে নিখোঁজ হয়ে গেলেন। তার কোনো খবর দিতে তারা পারলেন না। না পারল বাংলাদেশ সরকার, না পারল তাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারত। তাহলে আমরা কি মনে করব?”

‘‘এটা একমাত্র করছে দুর্নীতি করা, টাকার পাহাড় তৈরি করা বিদেশের মাটিতে… এটাই কোনো ঘটনা কিনা আমরা জানি না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনিকে তার জীবননাশের উদ্দেশ্যে তার গাড়িতে হামলা এবং সেগুনবাগিচায় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনুকুল ইসলাম শ্রাবণের ওপরে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আবদুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনার, রুহুল কবির রিজভী, মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরাফত আলী সপুসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এএইচআর/এসএম