ঋণখেলাপি ও অর্থপাচারকারীদের তালিকা প্রকাশ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও জবাবদিহিতার দাবিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছিল গণসংহতি আন্দোলন। কিন্তু পুলিশি বাধায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে যেতে পারেনি গণসংহতির মিছিল।

মঙ্গলবার (২১ মে) দুপুর ১২টার দিকে তারা নটরডেম কলেজের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে আসার চেষ্টা করলে শাপলা চত্বরের আগেই তাদেরকে পুলিশ বাধা দেয়। কিছু সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির পর এখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শুরু করেন গণসংহতি আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে একটি ফন্দি আঁকলো। বিদ্যুৎ দেব বলে তারা কয়েকটি ভাই-ব্রাদার, আত্মীয়-স্বজনের কোম্পানির পকেটে আপনার আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ঢুকিয়ে দিতে শুরু করল। তারাই বলছে ৮০ শতাংশ ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। ভাই- ব্রাদারদের কোম্পানিগুলো বসিয়ে রেখে তারা এখন টাকা ঢালছে। আপনার আমার বিদ্যুতের বিল বাড়িয়ে এবং এই টাকা সরাসরি তাদের পকেটে দেওয়া। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশ। 

হুঁশিয়ারি করে জোনায়েদ সাকি বলেন, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ঋণ খেলাপিদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। সেটি না করলে আমরা আবার এখানে আসব। আজকে আমরা যতজন এসেছি আরও বেশি সংখ্যায় আসব। আপনাদের এই অফিসে থাকতে হলে এই ব্যবস্থাটা আপনাদের নিতে হবে। হয় আপনারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা থাকবেন, না হয় আপনাদের চলে যেতে হবে। অন্যান্য ব্যাংক মনিটর করার যে আইন আছে সেটা আরো মজবুত করতে হবে।

তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে ঋণখেলাপি কত বেড়েছে? আপনারা বলেন ঋণখেলাপির পরিমাণ ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সেটা আসলে ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ব্যাংকের পরিচালকরা পরস্পর পরস্পরের ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। কিন্তু ঋণখেলাপিদের পুনঃতফসিলের মধ্য দিয়ে আবারও ঋণ দিয়ে দেন। ঋণ ফেরত দেওয়ার চাপ না দিয়ে বাংলাদশে ব্যাংক সরকারের নির্দেশে নাকি ঋণ মাফ করে দেয়। আসলে এরা নানারকম ফন্দিফিকির করে ঋণ মওকুফ করে দেয়। জনগণের কাছে এগুলোর কোনো পরিসংখ্যান নাই। জনগণের সঞ্চিত টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে কতিপয় চিহ্নিত লুটেরা। অন্যদিকে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে সরকার মিলিয়ে দিয়ে নতুন ব্যাংক লোপাটের পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। দুর্বল ব্যাংকের লোপাটকারী পরিচালকদের শাস্তি তো হয়নি, বরং নতুন প্রমোশন পেয়ে তারা সবল ব্যাংকের পরিচালক হচ্ছে।

জোনায়েদ সাকি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সব কিছুর হিসাব আছে, লুটপাটের পরিমাণেরও হিসাব আছে। আমরা সব ঋণখেলাপির হিসাব চাই।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলিফ দেওয়ান, অঞ্জন দাস, মিজানুর রহমান মোল্লা, ঢাকা দক্ষিণের সদস্য সচিব সেলিমুজ্জামান সেলিম, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার, মনির উদ্দীন পাপ্পু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, দীপক রায়, তরিকুল সুজন প্রমুখ।

এদিকে সমাবেশকে ঘিরে সকাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে নিরাপত্তা জোরদারের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল।

এমএইচএন/জেডএস