দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের অংশ নেওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে অসন্তোষ ছিল আগে থেকেই। চেষ্টা করেও মন্ত্রী-এমপিদের দলীয় নির্দেশনা মানাতে পারছে না দলটি। এ নিয়ে হতাশ খোদ কেন্দ্রীয় নেতারাও।  

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপেও সংসদ সদস্যদের পারিবারিক প্রার্থী থাকায় ক্ষমতাসীন দলের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা হতাশা প্রকাশ করেছেন।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, দলের হাইকমান্ড নিদের্শ দিয়েছেন, আর সেই নিদের্শ এমপি-মন্ত্রীরা মানছে না, এটাও দেখতে হচ্ছে। কেন্দ্রের আজকের এই অবস্থার জন্য কেন্দ্রই দায়ী। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য, শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে লিপ্ত এবং দলকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছেন, এমন নেতাদের বার বার ক্ষমা করে দেওয়ার নজির রয়েছে। এ কারণেই তৃণমূলের সমস্যা সমাধান হয়নি। বরং তৃণমূল কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়েছে। সবাই জানে বা ধারণা করে নিয়েছে যে, নির্বাচনের পর আবারও ক্ষমা পাবে। তাই তো সিদ্ধান্ত মানছে না। দলের হাই কমান্ডের নিদের্শকে হালকাভাবে নেওয়া হচ্ছে। 

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথমে আমাদের সিদ্ধান্ত এমন ছিল যে, কোনো এমপি এবং মন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন নির্বাচন করতে পারবে না। পরে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি একটু সংশোধনী দেন। এখানে পরিবার বলতে কিন্তু স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তানদের কথা বুঝিয়েছেন তিনি। বাইরের কোনো ব্যক্তি বা কোনো স্বজন এর আওতাভুক্ত হবেন না। সেই হিসেবে আত্মীয়-স্বজন কিন্তু নির্বাচন করতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, যাদের সন্তানরা নির্বাচন করেছে অবশ্যই তাদের জবাব দিতে হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি মনে করি তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রের নির্দেশ পালন করছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা যে নির্দেশনা দিয়েছেন সেই নির্দেশনা তৃণমূলের নেতারা পালন করছেন। এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয়-স্বজন নিয়ে দু’একটা ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা যেই পারিবারিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেটাই আমাদের দলের ব্যাখ্যা।

তিনি আরও বলেন, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে খুব ভালো নির্বাচন হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। এই নির্বাচনে জনগণ তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের ব্যাপারে দল ব্যবস্থা নেবে,  এটা আমাদের সাধারণ সম্পাদক বলে দিয়েছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা মনে করছেন, প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের সময় যেমন কঠোরতা দেখানো হয়েছে, এখন সেখানে এক ধরনের শৈথিল্য রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভোটার উপস্থিতির বিষয়টি মাথায় রাখা হচ্ছে। যার কারণে পরের ধাপগুলোতে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজনদের বসিয়ে দেওয়ার বিষয়ে দল থেকে আর চাপাচাপি করা হবে না, বরং ভোট বাড়াতে সব প্রার্থী যাতে প্রচারের সুযোগ পান, সে বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হবে।

দলীয় সূত্র মতে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপেও প্রার্থী হিসেবে রয়ে গেছেন মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা। এর মধ্যে পাবনার ভাঙ্গুড়ায় বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বাকী বিল্লাহ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি স্থানীয় এমপি মকবুল হোসেনের ছেলে চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম হাসনাইন রাসেলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। পাবনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বাকী বিল্লাহ বলেন, এমপি মকবুল হোসেন এবং তার ছেলে রাসেল রাজনীতি পরিবর্তন করে ফেলেছেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর ওপর ব্যাপক নির্যাতন করা হয়েছে। থানায় অভিযোগ দিয়েও লাভ হয়নি। অব্যাহত নির্যাতনের কারণে কর্মী-সমর্থকরা হতাশ হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমার পক্ষে নির্বাচন করা সম্ভব হচ্ছে না। 

এ ছাড়া নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার স্ত্রী ফেরদৌসী ইসলাম উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়ে গেছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে চেয়ারম্যান পদে কোনো প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। এখানে তিন প্রার্থীর মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলামের ভাতিজা আমিনুল ইসলাম তুষার রয়েছেন।
কক্সবাজারের রামু উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের বড় ভাই সোহেল সরওয়ার কাজল। উখিয়া উপজেলায় মাঠে আছেন স্থানীয় এমপি শাহীন আক্তারের ভাই জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী।

কুমিল্লার মুরাদনগরে এখনও ভোটের মাঠে রয়েছেন এমপি জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে আহসানুল আলম কিশোর ও নাতি আল আমিন সরকার। ব্রাহ্মণপাড়ায় রয়েছেন এমপির ভাতিজা আবু তৈয়ব অপি। কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদের ছোট ভাই আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে প্রার্থী হয়েছেন তিনি।

এমএসআই/এনএফ