খালেদা জিয়া

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন। হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা শুরু হয়েছে। তার চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা আক্রান্ত হলেও এখন তার শরীরে ভাইরাসের লক্ষণ নেই। আর হাসপাতালে তাকে করোনার জন্য নয়, অন্যান্য শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। 

চিকিৎসকরা জানান, খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের শর্তে উল্লেখ ছিল, বাসা থেকেই তাকে চিকিৎসা নিতে হবে। কিন্তু গত ৮ মার্চ তৃতীয় দফা সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি (খালেদা জিয়া) চাইলে দেশের মধ্যে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন। তাই এখন প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজন হলে আবারও তাকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হতে পারে।          

চিকিৎসকরা বলছেন, খালেদা জিয়া আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিসে ভুগছেন দীর্ঘদিন ধরে। এছাড়া তার দুই হাঁটুর জয়েন্ট প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। এসব চিকিৎসা আগে তিনি দেশের বাইরে করিয়েছেন। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে তিনি কারাগারে থাকার কারণে আর চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। যার ফলে তিনি এখন হুইল চেয়ার এবং কারও সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। গত বছরের ২৬ মার্চ পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার তার সাজা স্থগিত করে মুক্তি দিলেও বাসার বাইরে চিকিৎসার অনুমতি ছিল না। ফলে, এসব রোগের যথার্থ চিকিৎসা শুরু করা যায়নি। এখন যেহেতু তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার বিষয়ে সরকারের আপত্তি নেই এবং অন্যদিকে করোনার কারণে তাকে যেহেতু হাসপাতালে আনতে হচ্ছে, তাই কয়েকদিন রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো করানো হচ্ছে। 

দু-তিন দিন হাসপাতালে থাকতে হবে খালেদা জিয়াকে

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ম্যাডাম তো করোনা থেকে সুস্থ। তার শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ নেই। আমরা এখন ম্যাডামের অন্য রোগের পরীক্ষাগুলো করাচ্ছি। মঙ্গলবারও কিছু পরীক্ষা হয়েছে। আজ (বুধবার) আরও কিছু পরীক্ষা হবে। সেগুলোর রিপোর্ট পর্যালোচনা করা হবে। তারপর ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা এবং তাকে বাসায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদ বলেন, করোনা আক্রান্তের ১৪ দিন পর এর ভয়াবহতা থাকে না। আর এখানে ১৪ দিন পার হওয়ার পর তারা করোনার টেস্ট করেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক ডাক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত এক বছর বাসা থেকে খালেদা জিয়ার দুইটি চিকিৎসা মোটামুটি হয়েছে। এখন তার ডায়াবেটিস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আছে। আপনার দেখেছেন গত বছর ২৬ মার্চ খালেদা জিয়া যখন বঙ্গবন্ধু হাসপাতাল থেকে বাসায় আসেন তখন তার বাম হাত একটা তোয়ালে দিয়ে ঢাকা ছিল। কারণ তার এই হাত অনেকটা বাঁকা হয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে তার এই হাত মোটামুটি সুস্থ আছে। এখন তার আর্থরাইটিস এবং হাঁটুর চিকিৎসা শুরু করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। সেজন্য আগে কিছু পরীক্ষা করা দরকার ছিল। সেগুলো আজ-কালকে শেষ করা হবে।

এই ডাক্তার আরও বলেন, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে খালেদা জিয়া ইস্যুতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো সন্তোষজনক। হাসপাতালে আসা-নেওয়ার পর পুরোপুরি নিরাপত্তা দিয়ে আসছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। একইসঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ওপর নেই কোনো চাপ। বিএনপির পক্ষ থেকেও তার চিকিৎসার পুরোপুরি আপডেট জানানো হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।               

জানা গেছে, আগামী শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) হাসপাতাল থেকে বাসায় যেতে পারেন খালেদা জিয়া। এরপর তার তৃতীয় দফা করোনা টেস্ট করা হবে। যদিও এখন তার করোনা টেস্ট করার খুব বেশি জরুরি বলে মনে করেন না ডাক্তাররা। 

খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির কারণে এতোদিন ম্যাডামকে হাসপাতাল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি। এখন যেহেতু তিনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেছেন এবং পরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালে আনতে হচ্ছে, তাই অন্যান্য পরীক্ষাগুলো করিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

এর আগে গত শনিবার (২৪ এপ্রিল) দ্বিতীয় দফায় খালেদা জিয়ার করোনা টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। সে আসার পর ডা. সিদ্দিকী গণমাধ্যমকে বলেন, খুব লো টাইপের করোনা পজিটিভ এসেছে তার (খালেদা জিয়ার)। আশা করি আগামী ৪-৫ দিন পরের টেস্টে তিনি করোনা নেগেটিভ হবেন।

এএইচআর/এইচকে