ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে। প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মোট এক হাজার ৮৯১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। জাতীয় নির্বাচন বয়কট করা নিবন্ধনহীন জামায়াতে ইসলামী এবারের উপজেলা নির্বাচন নিয়ে শুরুতে নমনীয় ছিল। তবে, ঈদের পরপরই সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে প্রার্থীদের সরে আসার নির্দেশ দিয়েছে দলটি।

জামায়াতের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণ ও নানা হিসাব-নিকাশে দেখা গেছে, উপজেলা নির্বাচনের ভোট হবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে। এমন নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভালো করার সম্ভাবনা খুবই কম বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার (১৫ এপ্রিল) ছিল ১৫০টি উপজেলায় মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। এবার সম্পূর্ণ অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয়েছে। এতে চেয়ারম্যান পদে ৬৯৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭২৪ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৭১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র বাছাই ১৭ এপ্রিল। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল, আর ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে।

জামায়াতের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ঈদের পরই দলীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার এ সিদ্ধান্ত হয়।

যদিও এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে শুরুর দিকে কিছুটা নমনীয় ছিল জামায়াত। জামায়াত অধ্যুষিত, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের চেয়ে দল ও ব্যক্তি জনপ্রিয়তায় জয়ের সম্ভাবনা আছে, এমন উপজেলাগুলোতে নির্বাচন করার ব্যাপারে দলের মাঠপর্যায়ে বার্তা ছিল। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও জেলা কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

তবে, প্রথম পর্বের উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখের আগেই সিদ্ধান্ত বদল আনে দলটি। অবশ্য এই নির্বাচনে যাওয়া বা বয়কটের সিদ্ধান্তের কোনো বিষয়ে দলটির পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। 

উপজেলা নির্বাচনে প্রচারণা চালিয়ে আসা জামায়াতের বিভিন্ন প্রার্থী, একাধিক জেলা জামায়াতের নেতাদের বক্তব্যে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে।

উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি স্বীকার করেছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়ার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ। 

যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা প্রথমে নমনীয় ছিলাম। যারা নির্বাচন করতে আগ্রহী, জনপ্রিয় অথবা দলগত জনসমর্থন যে জেলায় বেশি, সেখানে অনেক জামায়াতের নেতা প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় ছিলেন। গত ১৩ এপ্রিল নির্বাহী পরিষদের বৈঠক থেকে উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত হয়।

কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার নির্বাচনী গণতান্ত্রিক ধারার বিপরীতে। তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজনে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান চলমান অবস্থায় আমাদের মনে হয়েছে জাতীয় নির্বাচনের মতোই জোরপূর্বক তাদের প্রার্থীদের জয়ী করার যে মানসিকতা... সেখানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। সরকার দলের ক্ষমতায় থাকার জবরদখল মানসিকতার কারণেই আমরা এই নির্বাচন বয়কট করছি।

ঠিক কতজন প্রার্থী উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে প্রচারণায় ছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই নেতা বলেন, আমরা সাংগঠনিকভাবে নির্বাচনে যাবার সিদ্ধান্ত দেইনি। তবে, প্রত্যাহার বা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। জেলা ও উপজেলার দায়িত্বশীল নেতাদের মাধ্যমে সাংগঠনিক বার্তা জানানো হয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে জামায়াতও এই সরকারের অধীন গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বিএনপি এই উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না। 

ধর্মভিত্তিক দলগুলোর অন্যতম চরমোনাইয়ের পীরের ইসলামী আন্দোলনও সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জামায়াতও শেষ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিলো।

জেইউ/কেএ