উপজেলা নির্বাচন নিয়ে তৃণমূল আ.লীগ
সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় একক প্রার্থীর প্রস্তাব
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার নির্বাচনগুলোয় দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। স্বতন্ত্রভাবে দলের নেতারা নির্বাচন করতে পারবেন। যেকোনো প্রার্থীর পক্ষে দলের নেতারা ভোট করতে পারবেন। দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে কেন্দ্রের এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে একক প্রার্থীকে সমর্থনের প্রস্তাব করেছে দলটির তৃণমূল। আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় মতবিনিময় সভায় এমন প্রস্তাব করেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
রোববার (৩১ মার্চ) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং এমপিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ প্রস্তাব রাখা হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় একক প্রার্থীর সমর্থন দেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম জেলা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সালাম, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীসহ একাধিক নেতা বক্তব্য দেন।
বেলা ১১টার পর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়, যা চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। সূচনা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বক্তব্যে উপজেলা নির্বাচন, দলীয় কোন্দলসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দিকনির্দেশনামূলক কথা বলেন। পরে নেতাদের কথা শোনেন তিনি।
আরও পড়ুন
এসময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের সংসদ সদস্য, জেলা, মহানগর, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র মতে, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বৈঠকে বলেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নৌকার প্রতীক ও দলীয় প্রার্থী দেবে না, ঠিক আছে, তবে আমার কক্সবাজার জেলায় সংসদ নির্বাচনের পর জামায়াতের যেভাবে তৎপরতা বেড়েছে, আওয়ামী লীগ যদি দলের একক প্রার্থী না দেয় তাহলে উপজেলাগুলো তাদের প্রার্থীদের হাতে চলে যাবে। উন্মুক্ত থাকার সুযোগে একাধিক প্রার্থী হবে। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধ বেড়ে যাবে। নেতাদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব সৃষ্টি হবে। কেন্দ্র থেকে একক প্রার্থী বা একজনকে সমর্থন দেওয়া হলে আমরা বাধ্য হব তার পক্ষে কাজ করতে। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এর সমাধান চেয়েছেন বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
এ নেতার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, তৃণমূলে দলের কোথায় কি সমস্যা রয়েছে তা নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলে কেন্দ্র দেখবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফরিদুল ইসলাম বলেন, এটি আমাদের দলের অভ্যন্তরীণ সভা। সভায় অনেক কথাই হবে, সব তো বাইরে বলা যাবে না। আপনি আমাদের কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছে জানতে চান।
বৈঠকে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সালাম বলেন, বলা হচ্ছে এমপি-মন্ত্রী বা জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপজেলা নির্বাচনে মাথা ঘামাবেন না। মাথা ঘামানোটা দৃশ্যমান না, দেখা যায় না। সবাই মাথা ঘামাবে। সেটা থাকুক। আগেও উপজেলা নির্বাচন হতো দলীয় প্রতীক ছাড়া কিন্তু সেখানে দল একজনকে সমর্থন করত। তাহলে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা থাকে। এখন যদি একটা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে পাঁচ-সাত জন দাঁড়িয়ে যায়, সেখানে এমপি একজনকে সমর্থন করবেন। জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা আলাদা আলাদাভাবে সমর্থন করবেন। এতে সংগঠন আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বৈঠকে নেতাদের উদ্দেশে কুমিল্লা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, আমরা এমপি হতে পারিনি। যারা সংসদ সদস্য হয়েছেন তাদের এমপি হয়েই থাকা উচিত। যারা স্বতন্ত্র এমপি হয়েছেন, তাদের স্বতন্ত্রভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া উচিত। তাদের সংগঠনের বড় পদে রাখার দরকার নেই। স্বতন্ত্র এমপিরা দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করবে। তাদের নৈতিক দায়িত্ব পালন করবেন। মানুষের সেবা করবেন। সংগঠনের জন্য নেতাকর্মীরা আছে। সবাইকে পদে রাখতে চাইলে সংগঠন দুর্বল হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
একাধিক সূত্র মতে, সভায় চট্টগ্রাম জেলা ও চট্টগ্রাম মহানগরের নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও দ্বন্দ্ব দ্রুত নিষ্পত্তি করার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। জেলা কমিটিকে কোন্দল মিটিয়ে দলের মধ্যে চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা দেন তিনি। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর ও চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করতেও নির্দেশ দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচন শেষে ও ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটির সম্মেলন শেষ করার জন্য বলা হয়। পাশাপাশি আগামী বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের সব সাংগঠনিক শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়।
তখন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিম উদ্দিন বলেন, কেন্দ্র যখন বলবে, তখনই আমরা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করতে পারব। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, নির্বাচনে প্রশাসন কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। আমরা এমপি-মন্ত্রী সাহেবরা যদি হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকি তাহলে বিনা প্রতীকে নির্বাচন করার যে উদ্দেশ্য নেত্রী স্থির করেছেন তা সার্থক হবে। কেউ ক্ষমতার দাপট ও ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না। যার নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে করবেন। সে স্বাধীনতা আছে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। জনগণ যাকে ইচ্ছা নির্বাচিত করবে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন, যদি কোনো অনিয়ম মনে করে তারা ব্যবস্থা নেবে।
এমএসআই/এসএসএইচ