করোনা মোকাবিলায় বিএনপির ৭ দফা দাবি
করোনার দ্বিতীয় ধাপ মোকাবিলায় চলমান বিধিনিষেধের ক্ষতিগ্রস্ত দিনমজুর, পেশাজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের রাষ্ট্রীয় বিশেষ তহবিল থেকে প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য এককালীন নগদ ১৫ হাজার টাকা দেওয়াসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
শনিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব দাবি জানান। করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় টেউয়ে দেশের পরিস্থিতি ও করণীয় তুলে ধরতেই এই ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে করে বিএনপি।
বিজ্ঞাপন
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের প্রত্যেককে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য ১৫ হাজার টাকা এককালীন নগদ অর্থ সহায়তা, দরিদ্রদের ‘সুরক্ষায় সহায়তা’ প্যাকেজের আওতায় আনা, নিরপেক্ষভাবে দুঃস্থ উপকারভোগীদের তালিকা প্রস্তুতের দাবি জানায় বিএনপি।
এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্প ও কৃষিখাতে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে বিশেষ প্রণোদনা বরাদ্দ, রাজনৈতিক বিবেচনা না করে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পোদ্যোক্তা ও প্রবাসীদের রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ঋণ প্রণোদনা, উদ্যোক্তাদের পুঁজির ব্যবস্থার প্রস্তাব দলের পক্ষ থেকে তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
একই সঙ্গে ২০২০ সালের এপ্রিলে বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্নখাতে ৮৭ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ প্রণোদনা প্রস্তাব যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, আমরা পুরো জাতি আজ মহাসংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই মুহূর্তে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আমাদেরকে এই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে।
টিকা নিয়ে সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা
করোনার টিকা সংগ্রহে স্বেচ্ছাচারিতা ও নতুন অনিশ্চয়তা গোটা জাতিকে হতাশ করেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যবহার করে সরকারের ঘনিষ্ঠ ও শেয়ারবাজার লুটপাটে অভিযুক্ত এক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে টিকা সরবরাহের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। একচেটিয়া সুবিধা দিতে গিয়ে আজ সমগ্র জাতিকে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে ভোটারবিহীন দুর্নীতিবাজ এই সরকার।
তিনি আরও বলেন, একই উৎস থেকে টিকা সংগ্রহ করতে গিয়ে এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম থেকেই ভারতের বিকল্প সূত্র থেকে টিকা কেনার কথা আমরা বারবার করে বলেছি। কিন্তু কোনোটাই করা হয়নি। ফলে, এই ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এখন শেষ সময় এসে সরকার রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে পাওয়ার জন্য গ্রুপ তৈরি করে ভ্যাকসিন সংগ্রহের চিন্তা করছে। আমাদের মনে হয় সেটা দেরি হয়ে গেছে। আগে করতে পারলে অনেকটা কম হতে পারত।
মির্জা ফখরুল দাবি করেন, লকডাউনের নামে সরকার মূলত বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনকারী আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন ঘোষণা করেছে। লকডাউন শুরুর দিন থেকেই সারাদেশে ব্যাপকভাবে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ঢালাওভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে। দেশের প্রখ্যাত আলেম-ওলামাসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের শত শত নেতা-কর্মীকে নির্বিচারে গ্রেফতার ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারের অপকর্ম, দুর্নীতি, অত্যাচার, নির্যাতন ও ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে যাতে কেউ কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে না পারে সেজন্য সবাইকে নির্বতনমূলক আইনের আওতায় এনে কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে দলের নেতা-কর্মীদের যার যার সাধ্য অনুযায়ী ‘দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের’ পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
করোনা মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের জিডিপির ৫০ শতাংশ বরাদ্ধের পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, সেখানে বাংলাদেশের বরাদ্দ ১ দশমিক ৪ শতাংশ। বাংলাদেশের আর্থিক বরাদ্ধ নিয়ে আইএমএফের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, রাজস্ব থেকে ঘোষিত প্রণোদনার মধ্যে উপকারভোগীদের মাছে মাত্র ১৬ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। সেই বিবেচনায় জিডিপির অনুপাতে জনগণকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় একেবারেই তলানিতে। সরকারকে নতুন করে যুগোপযোগী অর্থনৈতিক প্রণোদনা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশে খাদ্য সংকটের ঝুঁকিতে
বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, অনেক পত্রিকায় এসেছে, এবার সবচেয়ে কম মজুদ যা মাত্র তিন লক্ষ টন। যেখানে ১১ লক্ষ টন থাকার কথা। এবার চালের মজুদ কম থাকায় আগে খাদ্য আমদানি করার কথা থাকলেও সেটা হয়নি। পত্রিকায় এসেছে, খাদ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারছেন না। মজুদদাররা মাঠ থেকে চড়া দামে ধান কিনে ফেলছে। সরকার এখনো ধান কেনা শুরু করেনি।
সঠিক মূল্য নির্ধারণ করে অবিলম্বে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার আহবান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, স্বল্প দামে জনগণের কাছে তা পৌঁছানোর জন্য ওএমএস কর্মসূচি দ্রুত বাড়ানোর অনুরোধ করছি সরকারকে।
এএইচআর/ওএফ