ভারত পাশে ছিল বলে অনেক দেশ অশুভ খেলা খেলতে সাহস পায়নি : কাদের
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভারত পাশে ছিল বলে পৃথিবীর অনেক শক্তিধর দেশ অশুভ খেলা খেলতে সাহস পায়নি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শনিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
সম্মেলনে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার উপস্থিতিতে দেওয়া বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শত অপপ্রচারের মধ্যেও আমাদের নির্বাচন আমরা করেছি। বলুক কেউ, ভারত হস্তক্ষেপ করেছে? কেন হস্তক্ষেপ করবে? অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রদূতরা যে পরিমাণ ছোটাছুটি করেছে, আমরা সেই ভূমিকায় ভারতকে দেখিনি। ভারতের হাইকমিশনার এই ধরনের ভূমিকায় যাননি।’
‘তারা বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন বাংলাদেশ করবে, অন্য কারো হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। সত্যি বলতে দুনিয়ার অনেক শক্তিধর দেশ এখানে যে অশুভ খেলা খেলতে চেয়েছিল, ভারত পাশে ছিল বলে অনেকে সাহস পায়নি,’ বলেন ওবায়দুল কাদের।
দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে ২১ বছর যারা দেশ শাসন করেছে, তারা এই ২১ বছর ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে বৈরিতা সৃষ্টি করেছে। সে কারণে আমাদের দীর্ঘদিনের অনেক সমস্যা ছিল, দ্বিপাক্ষিকভাবে আলোচনা করে অনেক সমস্যা সমাধান করা যায়। আমার কথা হচ্ছে, সম্পর্ক যদি ভালো থাকে তাহলে যেকোনো সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে পারি, সমস্যাও সমাধান করতে পারি।’
তিস্তা চুক্তি নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে অভিন্ন নদীর পানির বিষয়ে গঙ্গা চুক্তি কিন্তু আমরা করেছি। তিস্তা চুক্তিও আমি আশা করি ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। তবে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। গায়ে পড়ে ভারতের সঙ্গে তিক্ততা সৃষ্টি করে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আজকে গ্লোবাল ইকোনমি সেন্টার শিফট হয়ে গেছে। সারা বিশ্বের যে সমস্যা এটা শুধু আমাদের নয়, ভারতেরও সমস্যা।
‘ক্যাম্পিং চালিয়ে সম্পর্ককে বৈরিতার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সমীচীন নয়। দ্রব্যমূল্যের কারণে ভারতে কস্ট অব লিভিং অনেক হাই। বাংলাদেশেরও তাই। ভারতে জিনিসপত্রের দাম কম বাংলাদেশে বেশি এটা তো বাস্তবতা নয়। তাহলে কেন এই মনোভাব জাগ্রত করা হচ্ছে?’
দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনারা হীনম্মন্যতায় ভুগবেন না। সংখ্যালঘু ভাবনাটাই একটা দাসত্বের শেকল। এটি ভেঙে ফেলতে হবে। দাসত্ব কেন করবেন? মুসলমানের ভোট আর আপনার ভোটের মধ্যে কি কোনো পার্থক্য আছে? কোনো ভোটের মূল্য বেশি কোনো ভোটের মূল্য কম, এমনটি কি আছে? আমাদের সংবিধান এ কথা বলে? তাহলে আপনারা নিজেরা কেন মাইনরিটি কমপ্লেক্সে ভোগেন, আপনারা এই দেশের নাগরিক, এই দেশের মুক্তিযুদ্ধ, এই দেশের স্বাধিকার, স্বাধীনতার সংগ্রাম মুসলমানদের পাশে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সব বাঙালির অবদান, কারও অবদান কম নয়।‘
হিন্দুদের বাড়ি ঘরে যারা হামলা করে তাদের দুর্বৃত্ত আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমরা বিব্রত হই। কিছু কিছু লোকের রাজনৈতিক পরিচয়ও আছে, যারা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সম্পদ, তাদের মন্দির এসব স্পর্শকাতর বিষয়ে, যারা তাদের মনে কষ্ট দেয়, মন ভেঙে ফেলে। এসব লোকের যদিও রাজনৈতিক পরিচয় আছে, এদের আসল পরিচয়- এরা হচ্ছে দুর্বৃত্ত। এই দুর্বৃত্তরাই হিন্দুদের বাড়িঘর জমি দখল করে, তাদের মন্দির ভাঙচুর করে। এই দুর্বৃত্তরা আমাদের সবার শত্রু, আমাদের অভিন্ন শত্রু। এই অভিন্ন শত্রুদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। এর বিকল্প নেই।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা সরকার মাইনরিটির পক্ষের সরকার। স্বাধীনতা বিরোধীরা যে লাফালাফি করে, এদের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। এদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হওয়া দরকার। সেটাও আপনারা মনে রাখবেন। আজকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনেক দাবি পূরণ হয়নি। আপনারা এই দেশের নাগরিক, আপনারা জানেন কী ধরনের প্রতিকূল পরিবেশের স্রোতে আমরা সাঁতার কাটছি। এই অবস্থায়ও ঢাকেশ্বরীর জমি শেখ হাসিনা উদ্যোগ নিয়ে দিয়েছেন। কিছুই করেননি এটা ঠিক নয়।
বাজার সিন্ডিকেট নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সিন্ডিকেট কি ভালো? সিন্ডিকেট তো খারাপ, সরকার সিন্ডিকেটকে কেন সমর্থন করবে? সিন্ডিকেট যে বা যারাই করুক, এর সূত্র খুঁজতে হবে। প্রকৃত সূত্র বের করতে হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিকের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত।
এমএসআই/জেডএস