ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য এ কে আজাদ বলেছেন, চারটি বড় শিকল একটি দেশকে মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে দেয়। এই চার শিকল ভাঙতে না পারলে আমরা মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়ে যাবো।

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির উপর ধন্যবাদ প্রস্তাবে অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন। এসময় স্পিকার ড. শিরিন শারমিন সভাপতিত্ব করেন।

তিনি বলেন, যারা ঋণ নিয়ে কলকারখানায় বিনিয়োগ করে ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের ছাড় দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু যারা ঋণ নিয়ে পাচার করেছেন, বিদেশে বেগম পাড়া, সেকেন্ড হোম বানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিচারের আওতায় আনা এবং এই সংসদে তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করা দাবি করছি।

একে আজাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বলা হয়েছিল, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে। তারই আলোকে বলতে চাই, সবার আগে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশে এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা (সেপ্টেম্বর ২০২৩, বাংলাদেশ ব্যাংক)। কিন্তু অবলেপনের মাধ্যমে ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দেখানো হয়।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সাহসী নেতৃত্ব ছাড়া পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হতো না। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগও এক যুগান্তকারী ঘটনা। ঢাকা থেকে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত যে উন্নয়ন হয়েছে, তার সঙ্গে ফরিদপুর শহরকে যুক্ত করা দরকার। আমরা ফরিদপুরকে আধুনিক, উৎপাদনশীল এবং স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ জন্য ফরিদপুর পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা দরকার। ফরিদপুর-বরিশাল সড়ককে চার লেনে উন্নীত করার দাবিও করেন।

তিনি বলেন, ‘বিবিএস-এর ২০২২ সালের প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশের প্রায় ৪১ শতাংশ তরুণ নিষ্ক্রিয়। তারা পড়াশোনায় নেই, কর্মসংস্থানেও নেই; এমনকি কোনো কাজের প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন না। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সসীমার এই নিষ্ক্রিয় তরুণের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৯ লাখ। অন্যদিকে, গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ১৬৭ জন। আমাদের মানবসম্পদকে উপযুক্ত করে প্রশিক্ষিত করতে পারলে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে তেমনি দেশ থেকে রেমিট্যান্স চলে যাওয়াও ঠেকানো যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড তো পারেইনি, এমনকি মালয়েশিয়াও এখনও উচ্চ আয়ের দেশ হতে পারেনি। পৃথিবীর প্রায় শ’খানেক দেশ এখন মধ্যম পর্যায়ে পড়ে আছে। একে বলা হচ্ছে মধ্যম আয়ের ফাঁদ। চারটি বড় শিকল একটি দেশকে মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে দেয়। ব্যাংকিং খাতে দুর্বলতা, কর খাতের কম রাজস্ব আদায়, রপ্তানিতে একক পণ্যনির্ভরতা এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে অতি কম সরকারি ব্যয় এই চার শিকল ভাঙতে না পারলে আমরা মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়ে যাবো।’

গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে সংসদকে কার্যকর ও প্রাণবন্ত করতে চান জানিয়ে এই স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য বলেন, ‘সংসদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে, আমার ভোটারদের কাছে আমরা জবাবদিহি করতে চাই। আমরা গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে সংসদকে কার্যকর ও প্রাণবন্ত করতে চাই।

এসআর/এমএসএ