সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন নৌকা মার্কায় ভোট না দেওয়ায় তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। 

মঙ্গলবার (৬ জানুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন। ‘নারী সমাজের ওপর অপমানের শেষ কোথায়?’-শীর্ষক মানববন্ধনের আয়োজন করে নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দেশের সংখ্যালঘুরা নৌকা ছেড়ে ঈগলে ঝাঁপ দিয়েছে। তার কারণে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের কয়েকটি পত্রিকায় বলল, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে। আমরা ঝিনাইদহতে গিয়েছিলাম। সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা ঈগল মার্কার ভোট দিয়েছে। এই কারণে সংখ্যালঘুর ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে ফরিদপুরে। সেখানে একে আজাদের ঈগল মার্কায় ভোট দেওয়ার কারণে জেলে পাড়ার সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘একটা ভালো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তা হলো ভোট ব্যাংক ভেঙে গেছে। এই দেশের সংখ্যালঘুরা নৌকা ছেড়ে ঈগলে ঝাঁপ দিয়েছে। তারা নৌকায় ভোট দেয়নি। ভারতের নরেন্দ্র মোদি... যাদের জিম্মি করে আজ তুমি বাংলাদেশে রাজত্ব করছো, সেটি থাকবে না। এই রাজত্ব ভেঙে পড়বে। কারা ভাঙবে জনগণ ভাঙবে। আমরা জনগণের পাশে থাকব। দেশকে নতুন করে স্বাধীন করব। আর নয় প্রতিবাদ, এখন থেকে প্রতিশোধ...।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে ধর্ষণের শিকার নারীর প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ধর্ষণের সেঞ্চুরি পালিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করেছিল পাকিস্থানি বর্বর বাহিনী। আর আজকে যারা আমার মা-বোনের সম্ভ্রম নষ্ট করছে, তারা কোন বাহিনী?’

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের বিচারে প্রয়োজন হলে ৫০ বছর অপেক্ষা করতে হবে— আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্যের প্রসঙ্গে গয়েশ্বর বলেন, ‘এ রকম জঘন্য হত্যাকাণ্ডের বিচার ৫০ বছরেও যদি পাওয়া না যায়, তাহলে তাদের কী ৫০ দিন ক্ষমতায় রাখার দায়িত্ব আছে আমাদের?’

সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশে আর কোনো দিন ভোট হবে না দাবি করে তিনি বলেন, ‘তাদের ক্ষমতায় রেখে কখনো দেশের স্বাধীনতা থাকবে না। তাদের ক্ষমতায় রাখলে কখনো মানুষ নিরাপদ বোধ করবে না। অর্থাৎ মানসম্মান তো দূরের কথা, জীবন নিয়েও বেঁচে থাকার সুযোগ থাকবে না।’

মিয়ানমার সীমান্তে সংঘাতপূর্ণ উদ্ভূত পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘ভারত সীমান্তে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। মিয়ানমার সীমান্তে ওপার থেকে গুলি এসে মানুষ মরছে। কিন্তু আমাদের কোনো আওয়াজ আছে? নেই, কেন নেই। তাহলে কেন হাজার-হাজার কোটি টাকা দিয়ে অস্ত্র কিনি? কেন এতো আধুনিক অস্ত্র কিনি? সেই অস্ত্র যদি সেই দেশের জনগণের ওপর বারবার চালানো হয়, তাহলে সেই দেশকে কী স্বাধীন বলা যায়? কোনো মতেই স্বাধীন বলা যায় না। এ জন্য তো দেশ স্বাধীন করিনি। অন্যের গোলামি করে ক্ষমতার মসনদে বসে থাকার জন্য দেশ স্বাধীন করিনি।’

‘আর আইনের কথা কী বলব? পুলিশি হেফাজতে বডিবিল্ডার ফারুকের মৃত্যুর হয়। প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, আপনার সোনার ছেলেদের কী এ জন্য পোশাক দেওয়া হয়। এ জন্য কী আমরা দেশে ট্যাক্স দেই? গুন্ডামি করতে হলে করুক, পুলিশের পোশাক খুলে করুক।’

তিনি বলেন, ‘আমি যদি এখন আদালতকে একটা গালি দেই, তাহলে কালকে কোর্টে নিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখবে। কিন্তু ওই পুলিশ অফিসারকে আদালত ডাকে না। অথচ এটা নিয়ে আইন আছে। আজ বিচারক ও আদালত যদি নিজেদের চাকরির জন্য অন্ধ হয়ে যায়, তাহলে মানুষ কোথায় যাবে?’ 

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায় চৌধুরীসহ অনেকে।

এএইচআর/কেএ