নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দুজনকেই দায়ী করলেও চুন্নুর প্রতি বেশি ক্ষোভ জাতীয় পার্টির নেতাদের। তাদের অনেকে চুন্নুকে প্রতারক ও বাটপার বলে অভিহিত করেছেন। পাশাপাশি যুগ্ম মহাসচিব রেজাউল করিমেরও তীব্র সমালোচনা করেছেন তারা।

দলটির বিক্ষুব্ধ নেতাদের দাবি, নির্বাচন উপলক্ষ্যে সরকার জাতীয় পার্টিকে অনেক টাকা দিয়েছে। বেশি আসনে ছাড় দিতেও রাজি ছিল। কিন্তু নিজেদের ব্যর্থতার কারণে জাতীয় পার্টি সেটা আদায় করতে পারেনি। এর জন্য দলের মহাসচিব চুন্নু বেশি দায়ী বলে মনে করেন তারা।

রোববার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের এক মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়। সেখানে বক্তারা দলের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে আলোচনা করেন। সভার মঞ্চে ছিলেন জাপার কেন্দ্রীয় চার নেতা। নির্বাচনে অংশ নেওয়া জাপার শতাধিক প্রার্থী সভায় অংশ নিয়েছেন বলে আয়োজকরা জানান।

মতবিনিময় সভায় দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে প্রতারক ও বাটপার বলে দাবি করেন নোয়াখালী-৩ আসন থেকে নির্বাচন করা জাতীয় পার্টির প্রার্থী ফজলে এলাহী সোহাগ। তিনি বলেন, আমি নির্বাচনের সময় মহাসচিবকে শতাধিক বার ফোন দিয়েছি, কিন্তু তিনি ধরেননি। তিনি একজন প্রতারক ও বাটপার। তিনি সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে আমাদের প্রার্থীদের না দিয়ে নিজের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, আজকের এ সভায় আমি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা কিংবা লিয়াকত হোসেন খোকা ভাইকে ডাকিনি। ২০-২২ জন প্রার্থী আমার কাছে এসে নির্বাচনে দলের সহযোগিতা না পাওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের অনুরোধে এ সভা ডাকা হয়েছে।

তিনি বলেন, নির্বাচন উপলক্ষ্যে সরকার জাতীয় পার্টিকে ভরপুর দিয়েছে। সরকার কোনো কার্পণ্য করেনি। টাকা-পয়সা দিয়েছে, আসনও বেশি ছাড় দিতে রাজি ছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান ও মহাসচিব আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। মহাসচিবের ব্যর্থতার কারণে আজ জাতীয় পার্টির এ অবস্থা।

সেন্টু বলেন, প্রার্থীরা যখন আমার কাছে এসে ক্ষোভ জানাল, তখন আমি মহাসচিবকে ফোন করি। তিনি আমাকে বললেন, অল্প কিছু টাকা পেয়েছেন। সেখান থেকে একটা অংশ তিনি শেরিফা কাদেরের (জিএম কাদেরের স্ত্রী) কাছে রেখে নিজের নির্বাচন করতে চলে গেছেন। কিন্তু সেখান থেকেও প্রার্থীরা কোনো সহযোগিতা পাননি।

জিএম কাদের ও চুন্নুকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, কাজী ফিরোজ রশীদ ও সুনীল শুভ রায়ের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করে নিন। পার্টিতে বহিষ্কার ও আঘাতপ্রাপ্ত নেতা বেশি হয়ে গেছে। আঘাতপ্রাপ্ত ও বহিষ্কার হওয়া নেতারা একজোট হয়ে গেলে আপনাদের টিকে থাকা মুশকিল হয়ে যাবে। আর আমি নিজে জাতীয় পার্টিতে থাকব কি থাকব না, সেটা খুব শিগগিরই জানিয়ে দেব। আমাকে বহিষ্কার করা লাগবে না।

দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, আমরা কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এ সভা করছি না। চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আমরা জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করতে চাই। কিন্তু কিছু লোক চেয়ারম্যানকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। যাদের কোনো নেতাকর্মী নেই। তারা নিজেদের অবস্থান শক্ত রাখতে পার্টির মধ্যে বিভেদ তৈরি করছে।

সিরাজগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী ফজলুল হক বলেন, আজকের এই মিটিংয়ের পর হয়ত শুনব দলে থেকে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাতে কিছু যায় আসে না।

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিতে কিছু নেতা আছে, যাদের মেম্বার হওয়ার যোগ্যতাও নেই। তারা আবার সংসদ সদস্য হতে চায়।

দলের মহাসচিব চুন্নু ও যুগ্ম মহাসচিব রেজাউল করিমকে চরিত্রহীন উল্লেখ করে জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহিনুর সুলতানা লিমা বলেন, সবাই বলেন আমি চেয়ারম্যানের কাছের লোক ছিলাম। কিন্তু পর হয়ে গেলাম কীভাবে? লম্পট রেজাউল কবির ও মহাসচিবের কারণে। তাদের অনেক কিছু আমার কাছে আছে।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতায় ঢাকা-১৮ আসনে দলের চেয়ারম্যানের স্ত্রী শেরিফা কাদের কোন যোগ্যতায় মনোনয়ন পেয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচন করা ইয়াহিয়া চৌধুরী।

এ ছাড়াও বক্তারা দলের মহাসচিবের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরেন।

সভায় আরও বক্তব্য দেন দলের কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন মিলন প্রমুখ।

এএইচআর/এসএসএইচ