বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী / ফাইল ছবি

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় একজন পুলিশ সদস্য ও একজন দলীয় কর্মী মারা যান। ওই দিন রাত থেকে বন্ধ রয়েছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করা দলটির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। নির্বাচনের দিনও (৭ জানুয়ারি) দলটির কার্যালয় খোলার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে।

তবে, ‘আত্মগোপনে’ থাকা দলটির নেতারা ভোট বর্জনের দাবিতের ৬ জানুয়ারি সকাল থেকে ৮ জানুয়ারি সকাল পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি পালন করছেন।

বিএনপির নেতারা বলছেন, ২০০৭ সালের ১/১১ সরকারের সময় দীর্ঘদিন নয়াপল্টন কার্যালয় বন্ধ ছিল। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত সাব-জেলে ৩৭২ দিন কাটানোর পর ১১ সেপ্টেম্বর মুক্তি পান খালেদা জিয়া। ওই সময় গ্রেপ্তার আতঙ্কে বন্ধ ছিল বিএনপি কার্যালয়। এরপর আর কখনও এত দীর্ঘসময় বন্ধ ছিল না কার্যালয়টি। তবে, বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে তাতে কবে আবার দলীয় কার্যালয় খুলে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে, সেটি এখন বলা যাচ্ছে না।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী / ফাইল ছবি

বিএনপির কার্যালয় বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র আমাদের কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে। যাতে তারা একতরফা নির্বাচন করতে পারে। আমাদের নেতাকর্মীরা যাতে একতরফার এ নির্বাচনের বিরুদ্ধে গণজমায়েত হতে না পারে। শুধু তা-ই নয়, সরকার তার অশুভ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সিনিয়র নেতাদের জেলে পুরে রেখেছে।

কার্যালয় বন্ধ থাকার কারণে বিএনপির দাপ্তরিক কাজে কোনো বাধা হচ্ছে কি না— জানতে চাইলে রিজভী বলেন, ‘বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে তো সরকার কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে। যেমন- আমাদের যে অফিসিয়াল ব্যবস্থাপনা ছিল, পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা, পার্টির সংবাদগুলো গণমাধ্যমে পাঠানো, সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা—সবই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তারপরও আমাদের আন্দোলন চলমান রয়েছে। আশা করি, গণআন্দোলনের মুখে এ স্বৈরাচার সরকার বিদায় নিতে বাধ্য হবে।’

বিএনপির মিডিয়া সেলের অন্যতম সদস্য শায়রুল কবির খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দীর্ঘদিন আমাদের অফিস বন্ধ ছিল। পরে দেশনেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করে অফিসে যান।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পরেও বিএনপির চলমান আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। সেক্ষেত্রে সরকারও তার দমন-পীড়ন অব্যাহত রাখবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কারাগারে থাকা নেতারা জামিনে মুক্তি পেলে তখন হয়তো কার্যালয় খোলা হতে পারে
বিএনপির অভিযোগ, গণজমায়েত এড়াতে দলটির নয়াপল্টনের কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে সরকার / ফাইল ছবি

কবে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরবে বিএনপি

বিএনপির নেতারা বলছেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পরেও বিএনপির চলমান আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। সেক্ষেত্রে সরকারও তার দমন-পীড়ন অব্যাহত রাখবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কারাগারে থাকা নেতারা জামিনে মুক্তি পেলে তখন হয়তো কার্যালয় খোলা হতে পারে। কারণ, এখন দলের যেসব নেতাকর্মী কারাগারের বাইরে আত্মগোপনে আছেন, তারা কার্যালয় খুলতে গেলে গ্রেপ্তার হতে পারেন। জামিন পাওয়া নেতারাও কার্যালয় খুলতে গেলে পুনরায় গ্রেপ্তার হতে পারেন।

এ বিষয়ে বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, মহাসচিব কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার আগে দলীয় কার্যালয় খোলার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ, আত্মগোপনে থাকা নেতারা তো গ্রেপ্তারের ভয়ে কার্যালয়ে যান না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগে কেউ কার্যালয়ে যাবেন বলেও মনে হয় না। আত্মগোপনে থেকে যতটুকু পারা যায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা রয়েছে দলের হাইকমান্ড থেকে।

এএইচআর/পিএইচ