নতুন বছরে আ.লীগের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ
# ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে
# স্বতন্ত্র ইস্যু চাপা দিয়ে দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে
# নির্বাচনের পরের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে
# দ্রব্যমূল্য কমাতে হবে
নানা উন্নয়নমূলক কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নসহ বিরোধী শক্তির বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবিলার মধ্যদিয়ে ২০২৩ সাল পার করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নতুন বছরে দলটির সামনে নতুন নতুন অনেক চ্যালেঞ্জ আসছে।
বিজ্ঞাপন
বছরের শুরুতে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে আ.লীগকে। দুয়ারে কড়া নাড়ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা আওয়ামী লীগের প্রথম চ্যালেঞ্জ। এছাড়া, নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দলের সাংগঠনিক তৎপরতা ও রাজনীতির মাঠে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করার বিষয়টিকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে দলটি। নির্বাচনকে ঘিরে দলের মধ্যে যে কোন্দল ও গ্রুপিং চলছে, বিশেষ করে স্বতন্ত্র ও দলীয় প্রার্থীর মধ্যে যে সমস্যা, সেটিকে সমাধান করে দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারাটাও চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলটির সিনিয়র নেতারা।
শুরুতে নির্বাচন বয়কট করে এখন তা ‘প্রতিরোধ’ করতে মাঠে নেমেছে বিএনপি। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যেতে লিফলেট বিতরণ থেকে শুরু করে বেশকিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে দলটি। বিএনপির ডাকে সায় দিয়ে নির্বাচনবিরোধী প্রচারণায় মাঠে নেমেছে সমমনা আরও কয়েকটি দল। তাই ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসা এবং ৬০ শতাংশের ওপরে ভোটার উপস্থিতি রাখাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্বাচনের এই সময়টা নানা রকম ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে নানা উৎকণ্ঠা বা সংশয় রয়েছে। তবে আমি আশাবাদী যে, সরকার আবার নির্বাচিত হয়ে জনগণের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করবে। পাশাপাশি দেশ ও জাতির উন্নয়ন অব্যাহত রাখবে।
বিএনপির ভোট বয়কটের আহ্বান সম্পর্কে তিনি বলেন, কোনো কোনো জায়গায় এটি একটু চ্যালেঞ্জের হয়ে যাচ্ছে। তবে, আমাদের সারা দেশের প্রার্থী, আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি এবং প্রতিটি কেন্দ্রের কমিটির মাধ্যমে নির্দিষ্ট এলাকার ভোটারদের স্ব-সম্মানে কেন্দ্রে আনার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া, প্রচুর পরিমাণে স্বেচ্ছাসেবক থাকবে, তারা ভোটারদের নিরাপদে ফেরত দিয়ে আসার ব্যাপারেও সহযোগিতা করবে।
আরও পড়ুন
আ.লীগের দলীয় কয়েকটি সূত্র মতে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংকটের মধ্য দিয়ে পার হওয়া এ বছরের পুরো সময়জুড়ে ছিল বিরোধীদের আন্দোলন ও আসন্ন নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মসূচি। এ বছর বিরোধী দলগুলো রাজনীতির মাঠে বেশ সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যেই সরকার তার পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে গেছে এবং কিছু ক্ষেত্রে সফলতাও পেয়েছে। আবার আন্তর্জাতিক মহলের দিকেও নজর রেখেছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ভাষ্য, দেশে এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষের জন্য বড় সংকট হয়ে এসেছে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। নির্বাচনের আগে এটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই নতুন বছরে আওয়ামী লীগের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম কমানো।
নতুন বছরে আওয়ামী লীগ কী কী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে? এ প্রশ্নের জবাবে দলটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে আছে। গ্লোবাল ভিলেজে বাংলাদেশ এর শিকার হতে পারে। অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় নিয়ে আসা এবং উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই যাত্রাকে অব্যাহত রাখাই আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জনের নামে মূলত বানচাল করার জন্য নানা ধরনের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে এসে নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অবশ্যই একটা চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ সারা দেশের নেতাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। যাতে একটা বড় সংখ্যক ভোটার ভোটকেন্দ্রে আসে এবং তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে।
বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন-সংগ্রামের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আমি মনে করি যে, আন্দোলন করার ক্ষেত্রে কাউকে বাধা দেওয়া অগণতান্ত্রিক। তবে, আন্দোলনের নামে যদি তারা অরাজকতা সৃষ্টি করতে আসে বা করতে চায়, তাহলে নিশ্চয়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোরভাবে দমন করবে। একইসঙ্গে, আমি মনে করি, কোনো জনবিচ্ছিন্ন দাবি কখনো মানুষের সমর্থন পায় না। অতীতেও বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন দাবির নামে আন্দোলন করায় তাদের আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়েছে, সাফল্য পায়নি। ভবিষ্যতেও তাদের আন্দোলন সফল হওয়ার সম্ভাবনা আমি দেখছি না।
২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৪ সালে বিএনপির অনুপস্থিতিতে একতরফা নির্বাচনে পুনরায় জয় পায় দলটি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও কৌশলে জয় ছিনিয়ে নেয় আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়। বিএনপি ও তাদের মিত্ররা এখন সরকার পতনের একদফা দাবিতে আন্দোলন করছে। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে।
তাই শেখ হাসিনার অধীনে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করে দেখিয়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি আওয়মী লীগেরও রয়েছে বলে মনে করছে দলটির হাই কমান্ড। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বারবার সেই বার্তা দিচ্ছেন। গত ২৮ ডিসেম্বর কয়েকটি জেলার নির্বাচনী জনসভায় দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নানা রকম চক্রান্ত হচ্ছে, সে কারণে নির্বাচনের পরিবেশটা যেন সুন্দর হয়, উৎসবমুখর হয় ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আপনারা বজায় রাখবেন।’
এমএসআই/কেএ