বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আগে দেখেছি চুরি বা জালিয়াতি হতো গোপনে। কিন্তু ১৮ সালে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন আর আওয়ামী লীগ মিলে জনসমক্ষে ভোট ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। এখন যে প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন চলছে তা অত্যন্ত হাস্যকর। সিন্ডিকেট করে বাজার লুট, ব্যাংক লুট, শেয়ারবাজার লুটের যে মহোৎসব আওয়ামী লীগ চালিয়েছে, সেই লোভেই তারা ক্ষমতা ছাড়তে চায় না।

তিনি বলেন, জনগণের ওপর গত ১৫ বছর যে সীমাহীন নির্যাতন চালিয়েছে সরকার তাতে ক্ষমতায় না থাকলে কী পরিণতি হবে সেই ভয়ও তাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের ভয় আর লোভ থেকে যে নির্বাচনী প্রহসনের আয়োজন তাতে জনগণের কোনো অংশগ্রহণ নেই। এই ভোটে জনগণ অংশ নেবে না।

শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) প্রেস ক্লাবে এবি পার্টি কর্তৃক আয়োজিত ‘দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জন, অংশগ্রহণ ও ডামি ভোটাভুটি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, গণফোরাম সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, খ্যাতিমান আলোকচিত্রি ও মানবাধিকার সংগঠক ড. শহীদুল আলম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি ড. রেজা কিবরিয়া, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বাংলাদেশ খেলাফত  মজলিশের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন, এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার প্রমুখ।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপিরা যে হলফনামা দিয়েছেন তা আগে দেখলে মানুষ আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো পার্টি করত না। এভাবে মানুষ টাকার মালিক হতে পারে তা কল্পনাও করা যায় না। গতকাল পত্রিকায় দেখলাম একজনেরই ৩০০ ফ্ল্যাট, যার সবই নাকি ইউরোপ আমেরিকায়। এখন একটাই উপায়, সরকারকে সকল সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চালাতে হবে। 

গণফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। যেখানে বিরোধীদল কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারে না, পোস্টার লাগাতে পারে না সেখানে নির্বাচন কিভাবে সুষ্ঠু হবে? এই দেশ স্বাধীনভাবে আর চলছে না, ২০১৪ সাল থেকে দেশের নির্বাচন পরিচালিত হচ্ছে ভারতের পরিকল্পনায়। আর কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না। জনগণ এই সমস্ত সার্কাসে অংশ নেবে না। 

মানবাধিকার সংগঠক ড. শহীদুল আলম বলেন, আর আমরা রাতের ভোট চাই না। এই জালিম সরকার মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাও বদলে ফেলেছে। আজ যারা আওয়ামী লীগের পদলেহন করছে না তাদেরই এখন রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এই অবস্থা আর চলতে পারে না। এবি পার্টিকে ধন্যবাদ এই উদ্যোগের জন্য। এই উদ্যোগ আমাদের আরও আগে নেওয়া দরকার ছিল।

খেলাফত মজলিশের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, সরকারের এই জুলুমের বিরুদ্ধে আমাদের একসঙ্গে রুখে দাঁড়াতে হবে। ডান, বাম দেখার আর সময় নেই। ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতা দখলের এই প্রক্রিয়া বার বার চলতে দেওয়া যায় না। আজ বিরোধীদলগুলোর কর্মসূচিতে হামলা করে, মামলা দিয়ে, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে একতরফা নির্বাচন করে শুধু কমিশনকে দিয়ে ফলাফল ঘোষণা করার অপেক্ষায় রয়েছে। সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনে বাধ্য করতে হবে। 

কমরেড সাইফুল হক বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন নির্বাচন খেলার আয়োজন করা হয়েছে। মানুষ ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করতে চায়, খেলা দেখতে মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাবে না। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আমি খুবই উদ্বিগ্ন। কারণ তিনি বলেছেন, বিএনপি রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে। এ ধরনের কথা আমরা আমরা বাকশাল কায়েমের আগে শুনেছি।  

ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে যে নাটক গণভবন থেকে চালানো হচ্ছে তা দুর্ভাগ্যজনক। কিছু দালাল ঠিক করে নির্বাচনের নামে প্রহসন করা হচ্ছে। ৭ তারিখের এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের মরণযাত্রা হয়ে দাঁড়াবে। 

এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ১৮ সালের ভোটকে আপনারা বলেন রাতের ভোট আসলে তা নয়। এটা আওয়ামী লীগের তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন কর্তৃক দিনে দুপুরে ডাকাতি করে ফলাফল ঘোষণার নির্বাচন। ৭ জানুয়ারির যে নির্বাচন তা একই প্রক্রিয়ায় ভোট ডাকাতির, হালুয়া রুটির ভাগাভাগির নির্বাচন। এ নির্বাচন যদি হয় তাহলে দেশ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে যা নিশ্চিত দুর্ভিক্ষের কবলে ফেলবে জনগণকে। 

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মাওলানা জালাল উদ্দিন বলেন, এই নির্বাচনে যারা অংশ নিয়েছে সবাই নৌকা চায়। তার মানে সবাই নিশ্চিত নৌকা মানেই নির্বাচিত। দেশে আজ দ্রব্যমূল্য নিয়ে হাহাকার চলছে, অথচ সরকার হাজার কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচনের নামে তামাশা শুরু করেছে। 

সভাপতির বক্তব্যে এএফএম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ নির্বাচনী অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে কোন দলীয় সরকারের অধীনে আয়োজিত নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ১৯৯১, ৯৬, ২০০১ এর নির্বাচন ছিল প্রশ্নের বাইরে, কারণ ভোটার উপস্থিতি, ভোট গ্রহণ পদ্ধতি, প্রার্থীদের প্রচার প্রক্রিয়া ছিল স্বচ্ছ। কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সবই প্রশ্নবিদ্ধ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামীজোট ভোট পায় ৮২.২৪ শতাংশ যা অবিশ্বাস্য অন্যদিকে ১৩৭টি আসনে ১১৭৯টি আসনে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্ট কোন ভোটই পায়নি। এটাই দেশজুড়ে হাজার হাজার ভোট কেন্দ্র থেকে বিরোধী দলের অস্তিত্ব বিলীন করে দেওয়ার প্রমাণ। যা দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা ও বিরোধীদল নিশ্চিহ্ন করার প্রক্রিয়া। 

ওএফএ/এসকেডি