সারা দেশে বইছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হওয়া। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে গণসংযোগ, প্রচার-প্রচারণা, প্রতিশ্রুতি আর ভোটারদের কাছাকাছি পৌঁছানোর প্রাণপণ চেষ্টায় আছেন সারাদেশের ৩০০ আসনের বিভিন্ন দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। যদিও প্রথমদিকে বিএনপিসহ সমমনা কিছু রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে অস্বস্তি তৈরি করেছিল। তবে স্বল্প সময়েই দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে সরকার পুরোদমে মাঠ গুছিয়ে নিয়েছে। ফলে আসন্ন নির্বাচনে অনেকগুলো নতুন দল, দলের জোট এবং একেবারেই নতুন মুখ সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন। 

প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, অনুযোগ এবং অভিযোগ সম্পর্কে ঢাকা-১০ আসনের বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট মনোনীত এমপি প্রার্থী শাহরিয়ার ইফতেখার সম্প্রতি মুখোমুখি হয়েছিলেন ঢাকা পোস্টের। দীর্ঘ আলাপচারিতায় তুলে ধরেছেন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রেক্ষাপট। ‘ছড়ি’ প্রতীক নিয়ে সরকার দলীয় প্রার্থী চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি। নির্বাচনকে ঘিরে শাহরিয়ার ইফতেখারের সঙ্গে বিভিন্ন আলাপচারিতার চৌম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. রাকিবুল হাসান তামিম

ঢাকা পোস্ট : প্রথমবার আপনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। অনুভূতি জানতে চাই।

শাহরিয়ার ইফতেখার : নির্বাচনে যদি সবগুলো দল থাকত তাহলে অনেক জমজমাট লাগত। বিশেষ করে বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। তারা যদি একসঙ্গে থেকে নির্বাচনে অংশ নিত তাহলে আমরা মনে করি নির্বাচন আরো বেশি অংশগ্রহণমূলক এবং জমজমাট হত। তারপরও নির্বাচনটা হয়েই যাচ্ছে। অনেকগুলো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। আমরাও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। তবে আওয়ামী লীগ সরকারকে বিশ্বাস করে নির্বাচনে আমরা আসিনি। কারণ আমরা দেখেছি, তারা ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচন করেছে, ২০১৮ সালে কারচুপি করে জয়লাভ করেছে। আমরা গণমুক্তি জোট নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের দিন পর্যন্ত আন্দোলনে ছিলাম। তবে শেষপর্যন্ত ‘সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে’ নির্বাচন কমিশনের এমন আশ্বাসে আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। তবে আমরা যত কথাই বলি না কেন, এই সরকার যেহেতু এখনো বহাল রয়েছে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। পুলিশ, প্রশাসন স্বাধীনভাবে নিরপেক্ষ থেকে কাজ করবে না। এমনকি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে যাদের মাঠে নামার কথা রয়েছে তারাও পারবে কি না সেটি নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। 

ঢাকা পোস্ট : আপনাদের যেহেতু সার্বিক অবস্থা নিয়ে সন্দেহ সংশয় আছে তাহলে কোন আশ্বাসের কারণে নির্বাচন করতে এলেন?

শাহরিয়ার ইফতেখার : প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, যদি একটিমাত্র জাল ভোটও কোনো কেন্দ্রে পড়ে, আর আমরা যদি তা প্রমাণসহ উপস্থাপন করতে পারি, তাহলে ওই কেন্দ্র বন্ধ করে দেব। আর নির্বাচনের আগের পরিবেশ সুন্দর রাখার ক্ষেত্রেও তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমি এরইমধ্যে সে প্রমাণও পেয়েছি। আমার নির্বাচনী অফিসের একেবারে সামনেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একটি অবৈধ অফিস নির্মাণ করেছিল। পরে বিষয়টি আমি নির্বাচন কমিশনকে জানালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে সেটি বন্ধ করা হয়েছে। তবে এই ঘটনার পর তারা (স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা) আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর আমি বিষয়টি নিউমার্কেট থানার ওসিকে জানালে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি উজ্জ্বল ও সেক্রেটারি লিটনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এই বিষয়গুলো থেকে আমরা কিছুটা ভরসা পাচ্ছি। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলছেন, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন লাগবে। আর সেখানে কিছু পাতি নেতারা গায়ের জোর খাটানোর চেষ্টা করছে।

ঢাকা পোস্ট : মাঠপর্যায়ে আপনার সক্রিয়তা কম, মানুষের এমন মন্তব্যের ব্যাপারে কি বলবেন?

শাহরিয়ার ইফতেখার : না, বিষয়টি পুরোপুরি সঠিক নয়। আমি সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকা থেকে আমার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছি। এরপর গ্রিন রোড, হাজারীবাগসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে ঘুরেছি। গণসংযোগ করেছি। আচরণবিধি মেনে আমার পোস্টার লাগানো হয়েছে। মাইকিং করা হচ্ছে। হ্যান্ডবিল দেওয়া হচ্ছে। আমি ঘরে ঘরে যাচ্ছি। শুরুতে আমি আমার এলাকায় পোস্টারিং করেছি। এরপর অন্যান্য এলাকায় ধীরে ধীরে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে পোস্টার অনেক ক্ষেত্রেই কে বা কারা রাতের অন্ধকারে ছিঁড়ে ফেলে সেটি আমি বলতে পারব না। অনেক জায়গায় পোস্টার লাগানোর পর আমরা আর সেটি দেখতে পাইনি।

ঢাকা পোস্ট : নির্বাচন করার মত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়েছে কিনা?

শাহরিয়ার ইফতেখার : এক বাক্যে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। আমার মনে হয়, পুরোপুরি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হয়নি। ৫০ শতাংশের মতো হয়েছে। নানাভাবে আমাদেরকে অস্বস্তিতে ফেলার মতো কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে নির্বাচন পর্যন্ত অবশ্যই আমরা মাঠে থাকব। আমি ঢাকা-১০ আসনের মানুষ। এখানে উড়ে এসে বসিনি। তাই আশাবাদী যে নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় অবশ্যই আমার জয় হবে।

ঢাকা পোস্ট : মানুষ কেন আপনাকে ভোট দেবে?

ইফতেখার শাহরিয়ার : সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের পক্ষ থেকে গত ২১ ডিসেম্বর ‘নির্বাচনী ইশতেহার’ ঘোষণা করেছি। যেখানে শুধু এই আসন নয় বরং এদেশের প্রতিটি অঞ্চলের ব্যাপক জনসমাজের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। আমি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করে মানুষের সেবা নিশ্চিত করব। বাজার দর ও একক পরিবারের জীবনমান বিবেচনায় শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে জোর দেব। বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য ভাতা প্রচলন করা এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার উদ্যোগ নেব। এছাড়াও আমাদের ঘোষিত ২৩ দফার ইশতেহার পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব। তবে ঢাকা-১০ আসন বাংলাদেশের ৩০০ আসনের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন। রাজধানীর ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, কলাবাগান, হাজারীবাগ এলাকা নিয়ে এটি গঠিত হয়েছে। এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান, স্থাপনা রয়েছে। যেগুলোর যথাযথ উন্নয়ন করার জন্যও আমি কাজ করব। এই সবগুলো বিষয়ই জনসাধারণের উন্নয়নের জন্য করা হবে। সেজন্য আমি প্রত্যাশা করি ‘ছড়ি’ প্রতীকে ভোট দিয়ে ঢাকা-১০ আসনের মানুষ আমাকে বিজয়ী করবেন।

ঢাকা পোস্ট : আপনাকে ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।

ইফতেখার শাহরিয়ার : আপনাকেও ধন্যবাদ। ঢাকা পোস্টের জন্য শুভকামনা।

আরএইচটি/জেডএস