ঢাকা-৯ আসন
ভোটে থাকলেও মাঠে নেই ৮ প্রার্থী, ফাঁকা মাঠে খেলবেন সাবের হোসেন
জমে উঠেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ঢাকা-৯ আসনে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। তার আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় অনেকটাই নির্ভার হয়ে তিনি নির্বাচনে লড়ছেন বলে ধারণা সাধারণ ভোটারদের। এদিকে এ আসনটিতে যারা লড়ছেন তারা যেমন রাজনীতির মাঠে নতুন তেমনি নির্বাচন ঘিরে নেই জনসম্পৃক্ততাও।
ঢাকা-৯ আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নয়জন মনোনীত প্রার্থী থাকলেও তাদের আটজনই অপরিচিত। সাবের হোসেন চৌধুরী ছাড়া এ আসনটিতে যারা লড়ছেন তাদের সবাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারই প্রথম নাম লিখিয়েছেন। ফলে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আসনটিতে ফাঁকা মাঠেই সাবের হোসেন চৌধুরী গোল করবেন বলে ধারণা ভোটারদের।
বিজ্ঞাপন
পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা-৯ আসনে মোট ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৬ জন। এদের মাঝে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২৮ হাজার ৩৬৪ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ৫৮৭ জন। অপরদিকে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৫ জন।
এ আসনে আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করে সাবালক হওয়া জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) প্রার্থী রয়েছেন কাজী আবুল খায়ের। বিএনপি না থাকায় দেশের বর্তমান প্রধান বিরোধী দল হিসেবে ট্যাগ পাওয়া এ দল থেকে এবারই প্রথম তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাম লিখিয়েছেন। তবে এ আসনের (সবুজবাগ-মুগদা-খিঁলগাও) কোথাও তার প্রচারণা দেখা যায়নি। দেখা যায়নি নির্বাচনী ক্যাম্পও।
আসনটিতে নতুন করে নাম লিখিয়েছেন ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ শফি উল্লাহ চৌধুরী। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিও এবারই প্রথম লড়ছেন। আসনটির কয়েকটি মোড়ে এ প্রার্থীর দুই-এক সারি পোস্টার ঝুলানো থাকলেও নেই প্রচারণা ও নির্বাচনী কার্যক্রম।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) থেকে কাঁঠাল প্রতীক নিয়ে এ আসনে লড়ছেন আনোয়ারুল ইসলাম। তিনিও প্রথমবার নাম লিখিয়েছেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ভোটের মাঠে কিংবা পোস্টারে, কোথাও দেখা মিলছে না তার।
মাছ প্রতীক নিয়ে এ আসনে লড়ছেন গণফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী তাহমিনা আক্তার। তিনিও ভোটে থাকলেও মাঠে নেই। পোস্টার, ব্যানার ফেস্টুন কিংবা জনসংযোগ; কোথাও মিলছে না তার দেখা।
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি থেকে একতারা প্রতীকে এ আসনে লড়ছেন মাহিদুল ইসলাম। প্রথমবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাম লেখানো এ নেতাও জনবিচ্ছিন্ন বলে দাবি সাধারণ ভোটারদের। ভোটে থাকলেও জনসংযোগ কিংবা পোস্টার; কোথাও নেই তিনি।
এদিকে সোনালী আঁশ নিয়ে এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রুবিনা আক্তার। তৃণমূল বিএনপি থেকে মনোনীত এ প্রার্থীও ভোটের মাঠে হাওয়া। প্রথমবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাম লেখানো এ প্রার্থীর লিফলেট কিংবা জনসংযোগ কোনো কিছুরই দেখা মিলছে না বলে জানিয়েছেন সাধারণ ভোটাররা।
ছড়ি প্রতীকে এ আসনে লড়ছেন সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের নুরুল হোসাইন। তিনিও প্রথমবার নাম লিখিয়েছেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এ আসনের কোথাও তার পোস্টার, লিফলেট, ক্যাম্প বা জনসংযোগ দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন
তবে রাস্তায় দুই-এক সারি পোস্টার ঝুলিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মোহাম্মদ কফিল। প্রথমবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাম লিখিয়ে আম প্রতীকে প্রচারণা চালানো এ প্রার্থীও জনবিচ্ছিন্ন বলে দাবি সাধারণত ভোটারদের।
সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন, এ আসনে একমাত্র হেভিওয়েট প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী। ছয়বার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৪ বার বিজয়ী হওয়া এ প্রার্থীর পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট ও নির্বাচনী ক্যাম্পে সরব রয়েছে আসনটি।
সবুজবাগ থানার ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুদ হাসান শামীম বলেন, অন্যান্য দলের প্রার্থীরা মাঠে কেন নেই সে বিষয়ে তারা ভালো বলতে পারবে। তারা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। হয়তো কোনো সংকটও রয়েছে। এ এলাকায় সাবের হোসেন চৌধুরী অনেক উন্নয়ন করেছেন। তার বিকল্প সাধারণ জনগণ কখনোই ভাববে না।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় ভোটার সোহেল মিয়া (ছদ্মনাম) বলেন, সাবের মিয়াকে ছাড়া আমরা অন্য কাউকে চিনিনা। শুনেছি আরও কয়েকটি দল থেকে নাকি অনেকেই নির্বাচন করছে কিন্তু আমি কাউকে চিনি না।
সবুজবাগ থানার আব্দুর রাজ্জাক নামের আরেক ভোটার বলেন, চারপাশে শুধু সাবের সাহেবের পোস্টার দেখছি। আর কারও পোস্টার, ব্যানার বা অন্যকিছুই তো চোখে পড়ছেনা। কারা নির্বাচন করছে আমরা জানিনা। কেউ আসেনি ভোট চাইতে। রাস্তাঘাটেও দেখিনি কাউকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ভোটার বলেন, এখন তো ভোট ভোট খেলা হচ্ছে। কে প্রচারণা চালাচ্ছে আর কে ঘরে বসে আছে এসব নিয়ে মানুষের মাথাব্যথা নাই। সাধারণ ভোটারদের কি এখন দাম আছে?
এমএম/পিএইচ