দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েও  ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে ফের আলোচনায় এসেছেন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। 

এবার তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার ইস্যুতে কথা বলেছেন হিরো আলম। ভোটের মাঠ আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর দখলে আখ্যা দিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। বলেন, সব তো আওয়ামী লীগের, আমজনতার আসন কোথায়?

রোববার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের প্রতি এ প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে একতরফা আখ্যা দিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে হিরো আলম বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রধানমন্ত্রীকে আমরা বলতে চাই, ৩০০ আসনের মধ্যে আপনারা আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী নিলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীও নিলেন। কিন্তু আমরা যারা আমজনতা আছি, তাদের আসন কোথায়?

হিরো আলম বলেন, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী থাকার পরও নির্বাচনের তাদের দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোনো দরকার ছিল না। আমি একটা উদাহরণ টেনে বলি, ব্যারিস্টার সুমনের যে আসন, সেখানে তিনি কিন্তু পার হবেন। সেখানে কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থী হেরে যাবে। কারণ নির্বাচনে দেখাবে, সেখানে ফেয়ার নির্বাচন হয়েছে। ফলফল কিন্তু আমি আগেই বলে দিলাম। ব্যারিস্টার সুমন কিন্তু প্রথমে দলীয় প্রতীকে প্রার্থিতা চেয়েছিল, কিন্তু তাকে দেওয়া হয় নাই। এরাও কিন্তু আওয়ামী লীগেরই কর্মী ও তাদের দলের লোক।

নিজের প্রার্থীতা বাতিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনারা সবাই বলেন, আমি ভোটের দিন প্রার্থিতা উইথড্র (বাতিল) করবো। কেন উইথড্র করতে চেয়েছি, এই যে পাতানো নির্বাচন, সারা বাংলাদেশের কেউ নির্বাচনে আসতেছে না। তারা কেন আসতেছে না, তারা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছে এই পাতানো নির্বাচনে তারা (আওয়ামী লীগ) প্রতিটা আসন ভাগ করে নিয়েছে। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে লাভ হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। আমি আজকে বলেছিলাম, এই নির্বাচনে আমি প্রার্থিতা উইথড্র করব। তার কারণ হচ্ছে নির্বাচন করে আমি অনেক মার খেয়েছি, লাঞ্ছিত হয়েছি। শুরুতে ভেবেছিলাম এই নির্বাচন একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। আমি দুদিন আগে নিজেই বলেছিলাম, আপনারা নির্বাচনে আসেন। 

তিনি আরো বলেন, আমি প্রার্থিতা উইথড্র করবো না। আপনারা নিশ্চয়ই বলবেন কেন করবো না? আপনারাই হিরো আলমকে হিরো বানিয়েছেন এবং আপনারাই আবার হিরো আলমকে জিরো বানিয়ে দেন। আপনারাই বলেছেন হিরো আলম টাকা খেয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছে, মার খাওয়ার ভয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছে। কিন্তু না, আমি এর আগেও নির্বাচন করেছি। হিরো আলম অন্যায়ের প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে নির্বাচন করেছিল। এই নির্বাচন পুরোটাই সরকারের সাজানো নির্বাচন। এই নির্বাচনে মারামারি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। এই নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হয়, সেটা দেখানোর মত যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী আছে, তারা কেউ নেই। এই নির্বাচন থেকে আমি যে কোনো সময় উইথড্র করতে পারি। নির্বাচনে টিকে থাকাটাই বড় কথা। 

আপনারা আমার সঙ্গে থাকবেন এবং দেখবেন এই নির্বাচনে কিভাবে জোর করে সিল মারে। নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হয় সেটা দেখানোর জন্যও একজন লোক থাকা প্রয়োজন। আমি হচ্ছি সেই। কিন্তু আমি যে কোনো সময় নির্বাচন থেকে সরে যেতে পারি।

এর আগে গত বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। 

বগুড়া সদরের এরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা হিরো আলম শৈশবে চানাচুর বিক্রি করতেন। পরে তিনি সিডি বিক্রি এবং ডিশ সংযোগের ব্যবসা করেন। নিজেই মিউজিক ভিডিও তৈরি করে ডিশ লাইনে সম্প্রচার শুরু করেন। ইউটিউবে প্রায় ৫০০ মিউজিক ভিডিও ছাড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে আলোচনায় আসেন হিরো আলম। এরপর বিভিন্ন সময় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে আলোচিত হন তিনি।

এমএইচএন/এমএসএ