দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের আসন ছাড়ের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। তাদেরকে এবার ৭টি আসনে ছাড় দেওয়া হবে। কে কোন আসনে ছাড় পাচ্ছে তা কালকের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে আওয়ামী লীগ। তবে ছাড় দেওয়া আসনেও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মুখোমুখি হতে হবে জোটের প্রার্থীদের।

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে আওয়ামী লীগ নেতা ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ‘আজ ১৪দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে আমরা বসেছিলাম। সেখানে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। জাসদকে ৩টি, ওয়ার্কার্স পার্টিকে ৩টি এবং জাতীয় পার্টিকে (জেপি) ১টি আসন ছেড়েছি আমরা।’

আওয়ামী লীগের একটি সূত্রে জানা গেছে, এবার তিনটি দলের সাতজনকে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমান তিন সংসদ সদস্য থাকছেন, জাসদের বর্তমান তিন এমপির মধ্যে একজন বাদ পড়ে নতুন করে একজন যুক্ত হয়েছেন আর জাতীয় পার্টি-জেপির একমাত্র আসনটি ছাড়ের তালিকায় রয়েছে। জোটের বর্তমান এমপিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত বাদ পড়ার তালিকায় আছেন চট্টগ্রাম-২ আসনে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি।

ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছাড় দেওয়ার তালিকায় রয়েছে বরিশাল-৩ (রাশেদ খান মেনন), রাজশাহী-২ (ফজলে হোসেন বাদশা) ও সাতক্ষীরা-১ (মুস্তফা লুৎফুল্লাহ) আসন। এসব আসনে ওয়ার্কার্স পার্টি নৌকায় নির্বাচন করবে। 

জাসদকে ছাড়ের তালিকায় আছে কুষ্টিয়া-২ (হাসানুল হক ইনু), বগুড়া-৪ (এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন) ও লক্ষ্মীপুর-৪ (মোশাররফ হোসেন)।

জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারকে (ফেনী-১) ছাড় না দিয়ে নির্বাচনের পর তাকে সংরক্ষিত আসনে এমপি বানানো হতে পারে বলে সূত্রে জানা গেছে।

জাতীয় পার্টি-জেপিকে পিরোজপুর-২ (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) ছাড় দেওয়া হবে।

ছাড় দেওয়া আসনে শরিকদের নৌকা প্রতীক দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেবে আওয়ামী লীগ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, শরিকদের সমর্থন দিয়ে নৌকা প্রতীক দেওয়া হলেও তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীর (আওয়ামী লীগ) মুখোমুখি হতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই বিজয়ী হয়ে আসতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের দল তাদের কোনো ধরনের ছাড় দেবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়ার্কার্স পার্টির এক সদস্য বলেন, আসন ভাগাভাগি এক ধরনের চূড়ান্ত হয়েছে। আমাদের বর্তমান তিনজন সংসদ সদস্যকে আওয়ামী লীগ ছাড় দেবে। এটা কালকে (শুক্রবার) বিকেলে বা পরশুদিন (শনিবার) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা আসবে। এর আগে আমি কোনো কথা বলতে চাই না।

চট্টগ্রাম-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি। আওয়ামী লীগ এবার আসনটিতে ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শুক্রবার সকালে ধানমন্ডির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পূর্বনির্ধারিত একটি সংবাদ সম্মেলন করবেন তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি। সেখানে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলবেন বলে জানা গেছে।

বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের আটজন এমপি রয়েছেন। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের তিনজন করে। আর জাতীয় পার্টি-জেপি ও তরিকত ফেডারেশনের একজন করে এমপি রয়েছেন। যার মধ্যে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর (কুষ্টিয়া-২) আসন ছাড়া বাকি সাতটিতে প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে শরিকদের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়েছে।

গত ৪ ডিসেম্বর ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন জোটপ্রধান শেখ হাসিনা। সেখানে আসন ভাগের বিষয়ে আলোচনার সমন্বয় করতে জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর তিনিসহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শরিকদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন।

এমএসআই/এসএম