মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে বা বিশেষ দিনগুলোতে হাতে লেখা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অংশ নিতো রাজনৈতিক দলগুলো। ডিজিটালের ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে হাতে লেখা ব্যানার। এখন বিভিন্ন দিবসে আগের মতো হাতে লেখা ব্যানার তেমন একটা দেখা যায় না। আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসেও একই চিত্র দেখা গেল। 

আজ সকাল ৭টার দিকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পাটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। শুধু রাজনৈতিক দল নয়, শ্রদ্ধা জানান শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যরাও। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়াও রাজধানীর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান।  

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই কয়েক শত প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলো শ্রদ্ধা জানায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি। এ সময় তাদের হাতে ছিল ফুলের তোড়া ও ব্যানার। অধিকাংশ ব্যানারই কম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরি করা। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও চিফ ইঞ্জিনিয়ার গোলাম রাব্বানী সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় কম্পিউটার ছিল না, তখন সবাই ব্যানার হাতে লিখতো, আমরা সেই ধারাবাহিকতাটা এখনো ধরে রেখেছি। হাতে লেখা ব্যানারের সাথে আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। আর হাতে লিখে আমাদের শিক্ষা জীবন শুরু, হাতের লেখাটা স্থায়ী জিনিস, নিজের হাতের লেখায় যে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা যায়, সেটা কম্পিউটারে করা যায় না। আর হাতে লিখলে লেখাটাও সুন্দর।

দেখা গেছে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), কর্মজীবী নারী, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ, আল আমিন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধা প্রাতিষ্ঠানিক ইউনিক কমান্ড, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশের যুব অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ, বাসদ (মার্কসবাদী)  ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতাকর্মীদের হাতে লেখা ব্যানার নিয়ে আসতে দেখা যায়। 

শ্রদ্ধা জানাতে আসা আতিকুল কবির নামে এক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধ করেছি, তখন দেশ এতো উন্নত ছিল না। আমরা হাতে লেখা ব্যানার নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে মিছিল করেছি। আমাদের আন্দোলনে হাতে লেখা ব্যানারই বেশি দেখা যেত। এখন দিন দিন তা কমে যাচ্ছে। দেশে আর্ট করা শিল্পীদের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। কারণ, এখন তো কেউ হাতে লিখতে চায় না। সবাই মিনিটের মধ্যে ডিজিটাল ব্যানার করতে চায়। 

তিনি আরও বলেন, আজকে এতো শত শত ব্যানারের মধ্যেও হাতে লেখা ব্যানার দেখা যায়; যা মুক্তিযুদ্ধ ও সংগ্রামের ধারক ও বাহক। মানুষের মনে এখনো হাতে লেখা ব্যানার কিংবা পোস্টারের চাহিদা রয়েছে। এই ব্যানার দেখলে এখনো মিছিল মিটিংয়ের কথা মনে পড়ে যায়। 

এমএসআই/এনএফ