পিটার হাস বিএনপি-জামায়াতের হয়ে কাজ করছেন : বিচারপতি মানিক
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেছেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাহেব ফালতু ক্লেইম করা মানুষদের ডেকে তাদের কথা শুনছেন। অথচ জিয়াউর রহমান যে ১৫শর বেশি মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছেন তাদের পরিবারের কাছে কিছুই জানতে চাচ্ছেন না। তাদের পরিবারের কাউকে ডেকে বলছেন না তোমাদের পরিবারের সঙ্গে কি হয়েছিল সেই কথাগুলা জানাও। পিটার হাস সাহেব যে এখন বিএনপি-জামায়াতের হয়ে কাজ করছেন এটা পরিষ্কার।
রোববার (১০ ডিসেম্বর) বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার একুশে আগস্টের ভুক্তভোগী পরিবার ও জিয়ার শাসন আমলে রাষ্ট্রীয় গুমের শিকার পরিবারবর্গের এক ব্যানারে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধনে বিচারপতি মানিক বলেন, এখানে যারা উপস্থিত আছে এবং নেই সবার দাবি পবিত্র সংসদ এলাকা হতে মানবাধিকার বিরোধী খুনি জিয়ার কবরের চিহ্ন সরাতে হবে। এ দাবি বহুদিনের। এটা অবশ্যই করতে হবে। তার মরোনত্তোর বিচারের দাবি রয়েছে। তার মরোনত্তোর বিচার করে অন্তত প্রমাণ করতে হবে জিয়া একজন খুনি। খুনি জিয়া এবং তার সহযোগীদের বিচারের জন্য আমরা একটি কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছিলাম। আমাদের সে দাবি এখনো মানা হয়নি। আমরা আশা করব দ্রুত এই কমিশন গঠন করে খুনি জিয়ার সব হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে।
তিনি বলেন, ‘১৯৭৭ সালে একটি জাপানি বিমান হাইজ্যাকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানপন্থি জিয়াউর রহমান বিচার নামক প্রহসনে অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছিল। ওই হাইজ্যাকে বাংলাদেশের কারো কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। কিন্তু জিয়াউর রহমানের সেই বিচারে এক মিনিটে একজন মানুষের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছিল। বিচারকালে তখন যেসব ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্বরত ছিলেন তারাই শিকার করেছে। জেনারেল মীর শওকত আলীও এ ঘটনা শিকার করে বলেছিলেন সেখানে বিচার হয়নি। বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে। নিয়মঅনুযায়ী ফাঁসির পরে তার লাশটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার কথা। কিন্তু সেসব লাশ কি পানিতে ফেলে দিয়েছে, নাকি জ্বালিয়ে দিয়েছে কেউ আজ পর্যন্ত জানে না। ১৫ শত মানুষেরা স্বজনরা জানে না তাদের প্রিয়জনের লাশ কোথায় আছে। কবর দেওয়া হয়েছে কি না। এমনকি তাদের মৃত্যু দিবসও জানে না।’
‘আজিমপুর কবরস্থানে যারা কবর খোড়ার দায়িত্বে ছিলেন তাদের বলা হয়েছিল এই লাশগুলোকে গণকবর দিতে। অনেকে তো কবরও পায়নি। কারো লাশ পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাউকে আবার বনে বাঘের মুখে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ এসব কাজ করে জিয়াউর রহমান নরপিচাশের পরিচয় দিয়েছেন। ৭৭ সালে তার ঘৃণিত কাজ নিয়ে বিশ্ব বিবেক কথা বললেও তৎকালীন সেসব দেশের প্রশাসকরা কিন্তু কথা বলেনি। এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে আজও কেউ কথা বলছে না।
শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস আসে কিন্তু খুনি জিয়া যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছিল তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। পাকিস্তানি প্রেসক্রিপশনেই জিয়া এসব হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল। এর আগেই পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের নির্দেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্যে দিয়েই জিয়ার খুনের রাজনীতি শুরু হয়েছিল। এছাড়া আরও হত্যা করা হয়েছিল চারনেতাকে। হত্যা করা হয়েছিল অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা এবং সেনা কর্মকর্তাকেও। খুন করার এই ট্রেন্ড তার পাকিস্তানপ্রেমী স্ত্রী খালেদা জিয়াও চালিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ২০০১ এর নির্বাচনের আগে ও পরে পাঁচ বছর খালেদা জিয়ার নির্দেশে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা বেশি হত্যার শিকার হয়েছিল। শত শত হিন্দু নারীকে নির্যাতন করা হয়েছে। অনেককে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। ২০০২ সালে খালেদা জিয়ার নির্দেশে অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে বহু মানুষকে হত্যা করা হয়েছে৷এই জিনিসগুলো কারও চোখে পড়ছে না।
অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশের মাটি থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের নিঃশেষ করতেই খুনি জিয়া এসব পরিকল্পনা সাজিয়েছিল। ৭১ সালে পাকিস্তানি সেনারা বাংলাদেশে যে গণহত্যা চালিয়েছিল সেটা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় গণহত্যা। অথচ আজও আমরা সেই গণহত্যার স্বীকৃতি পাইনি। বিশ্ব বিবেকের আমার প্রশ্ন তোমরা কি তোমাদের ইচ্ছামাফিক গণহত্যার মানদণ্ড দাও নাকি আসলে যে গণহত্যা হয়েছিল সেগুলো নিয়ে কথা বলো? ৭৭ সালের ঘটনা সারা বিশ্ব জানে। ওই সময়ে বিবিসি, রয়টার্স এসব হত্যাকাণ্ড খুব গুরুত্ব দিয়ে এ খবরগুলো প্রচার করেছিল। বিচারের নামে যে প্রহসন হয়েছে সে চিত্র তাদের প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল।
মানববন্ধনে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে খুন ও গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজনদের স্মৃতিচারণ করেন। একইসঙ্গে মেজর জিয়ার মরোনত্তোর বিচার দাবি করেন।
এমএম/এমএ