গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনের ট্রেন নাকি আর থামবে না। ট্রেন লাইনই তো নেই। সুতরাং এই ট্রেন নদীতে পড়বে, না সাগরে পড়বে সেটাই আমরা এখন পর্যন্ত জানি না। মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে, গণতন্ত্র নিয়ে, নির্বাচনের সুযোগ নিয়ে যে নয়ছয় করছেন, সেটা বাংলাদেশের মানুষ আর বরদাস্ত করবে না।

রোববার (৩ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত অবরোধের পক্ষে মিছিল শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

সাইফুল হক বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবের মুখ খুব শুকনা। কারণটা কী? ভেবেছিল, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার পরে দলে দলে লোকজন নির্বাচনে যুক্ত হবে। বিরোধী শিবির থেকে অসংখ্য দল ও লোককে তারা নির্বাচনের খেলায় যুক্ত করতে পারবে। কিন্তু দুই একটি নীতি-ভ্রষ্ট লোক, রাজনৈতিক আবর্জনা ছাড়া সরকারি ষড়যন্ত্রে কেউ পা দেয়নি। সরকারের এই নির্বাচন নির্বাচন খেলায় কেউ তাদের নাম যুক্ত করে নেই।

তিনি বলেন, আগামী ৭ তারিখে (৭ জানুয়ারি) দেশে একটা নির্বাচন হওয়ার কথা আছে। কিন্তু দেশে কী কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন করার অবস্থা আছে? যারা রাজনৈতিকভাবে এতিম, যারা আবর্জনায় পরিণত হয়েছে এ রকম কিছু জঙ্গল-আবর্জনাকে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের কাতারে যুক্ত করার চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। মানুষ এই নির্বাচনকে গ্রহণ করেনি, মানুষ এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই নির্বাচনকে বর্জন করার মনোভাব নিয়েছে।

সাইফুল হক বলেন, আগামীকালের মধ্যে নাকি মনোনয়ন পত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, নির্বাচন কমিশনকে এতো কষ্ট করার দরকার কী? প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেন, আওয়ামী লীগকে দায়িত্ব দেন। আগামী ৭ তারিখ কোন ৩০০ জনকে আপনারা নির্বাচিত ঘোষণা করবেন, সেই তালিকাটা আপনারা আগামীকালের মধ্যে শেষ করে ফেলতে পারেন। নির্বাচন করতে নাকি নির্বাচন কমিশনকে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। এই টাকা কেন খরচ করবেন? এই টাকা দেশের সম্পদ, জনগণের ট্যাক্সের টাকা। সাজানো নীল নকশার নির্বাচন করতে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা জাতীয় অপচয় আমরা মেনে নেব না। এ জন্য বলতে চাই, খরচ বন্ধ করেন। এই ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা খরচ করা মানে বাস্তবে এই টাকাটা নষ্ট করা। সেজন্য নির্বাচন নির্বাচন খেলাটা বন্ধ করেন।

বিএনপি থেকে লোক ভাগানোর চেষ্টা করছে জানিয়ে সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। তাদের এখন সম্বল হচ্ছে কীভাবে এই রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা যায়, কীভাবে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা যায় এবং এর মধ্য দিয়ে নিজেদের দেওলিয়াত্ব পুরোটা হাজির করা যায়। কীভাবে শাহজাহান ওমর সাহেবকে ভাগিয়ে নিলেন সেটা খেয়াল করবেন। এই শাহজাহান ওমরের বিরুদ্ধে তারা গাড়ি পোড়ানোর মামলা দিয়েছিল। গাড়ি পোড়ানোর মামলা, পুলিশ হত্যা করার মামলা, বিচারপতির বাড়ির ফটকে হামলা করার মামলা দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে গাড়ি পোড়ানোর মামলা দেওয়া হয়েছে। তাদের কারও জামিন হয় না। আর শাহজাহান ওমর জামিন পেয়ে একদিনের মধ্যে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়। আওয়ামী লীগ যে শাহজাহান ওমরকে দলে নিলেন, উনি কি এখন গাড়ি পোড়ানোর আসামি? নাকি না? এই সব মামলা যে ভুয়া মামলা, সেটা প্রমাণিত হলো তো?

তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই, এই সরকার যারা জনগণের ভোট ছাড়া কেবলমাত্র রাষ্ট্র শক্তিকে ব্যবহার করে দমন-পীড়ন করে ক্ষমতায় আছে; তাদের এই অন্যায় ভোটে আমরা বাংলাদেশের জনগণ কোন সহযোগিতা করব না। আমরা ভোট কেন্দ্রে যাব না। আমরা ওই ভোট বয়কট করে বাংলাদেশকে রক্ষার সংগ্রামকে শক্তিশালী করব।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, আজকে সরকারকে হুঁশিয়ারি করে বলতে চাই, বহু নাটক করেছেন, দুর্বল স্ক্রিপ্ট দিয়ে যে নাটক করার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে এই দেশের প্রতিবাদী সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবীসহ সকলে বলছে আজকে যে নির্বাচন হচ্ছে এটা কোন নির্বাচন না। এটি বরং তামাশা।  তাই বলতে চাই জনগণের সঙ্গে বহু তামাশা করেছেন, এগুলো জনগণ আর হজম করবে না।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, নাগরিক ঐক্যের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাখখারুল ইসলাম নবাব, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থ বিষয়ক সমন্বয়ক দিদারুল ভুঁইয়া, ভাসানী অনুসারী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আবু ইউসুফ সেলিম প্রমুখ।

এমএইচএন/এসকেডি