বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে চলা সম্ভব না হওয়ায় দলটির রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর।

নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন, আমি মনে করি ২০১৪ সালে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত ছিল। ২০১৮ সালে উচিত ছিল না। এবার যাওয়ার উচিত ছিল।

নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার কারণ জানতে চাইলে শাহজাহান ওমর বলেন, স্বতন্ত্র বলে কিছু আছে নাকি। আমি যখন একটা বেস্ট পার্টির প্রতীক পেয়েছি, তাহলে স্বতন্ত্র কেন নির্বাচন করবো?

আপনি কি জয়ের নিশ্চয়তা পেয়ে নির্বাচন করছেন? জানতে চাইলে শাহজাহান ওমর বলেন, আমাকে মনোনয়ন দাখিল করতে বলেছে, করেছি। নৌকার প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছি, আর কি চান।

এলাকায় উন্নয়ন করার জন্য এবং শান্তির জন্য নির্বাচন করছেন বলেও উল্লেখ করেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।

শাহজাহান ওমর বলেন, আমি আন্দোলন করেছি একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, যে নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করতে পারে।

বিএনপিকে ভোটে আনতে রাজি করাতে অনেক চেষ্টা করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনটি শর্তে ভোটে আসতে রাজি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আমি, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মুজিবুর রহমান সরোয়ার কেরানীগঞ্জে (ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার) একসঙ্গে ব্রেক ফাস্ট করলাম। সেখানে আমি বলেছি, নির্বাচনে যাওয়া উচিত। তখন মহাসচিব বললেন, ‘হ্যাঁ যাব, তিন কন্ডিশন। ম্যাডাম খালেদা জিয়ার মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার, ফ্রি ফেয়ার নির্বাচনের একটা অঙ্গীকার বা প্রেক্ষাপট’। আমরা এগ্রি করেছি। পরে আমি, আলাল (মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল), আলতাফ চৌধুরী (আলতাফ হোসেন চৌধুরী) কাশিমপুরে (কারাগার) গেলাম। এরপর আমরা আলাদা আলাদা, উনারা কী করেছেন জানি না।

আরেক প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান ওমর বলেন, গত ১৭ বছর আমার এলাকার জন্য আমি কিছু করতে পারিনি। এলাকার লোকজন মামলা-মোকাদ্দমায় জর্জরিত। তারা অতীতে আমাকে এমপি করেছিল। এখন আমার কিছু দায়িত্ব তাদের প্রতি রয়েছে। সেজন্য নির্বাচনে অংশ নিতে আমি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছি।

নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হবে বলে মনে করেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নেত্রী (শেখ হাসিনা) তো বলেন, ইলেকশন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার হবে।

‌‌‘কীসের চাপ, নো চাপ’

কোনও চাপে পড়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান বলেন, ‘কীসের চাপ। নো চাপ।’

এটি আকস্মিক কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২২ সালে আমি বিএনপি থেকে পদত্যাগের চিঠি দিয়েছি। তারপরেও আমি বিএনপিতে ছিলাম। নাউ আই ফিল আনকনফোরটেবল উইথ বিএনপি। আমি আওয়ামী লীগে জয়েন করেছি।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান ওমর বলেন, জিয়ার রাজনীতি ছেড়ে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে আসা আমি তো মনে করি প্রমোশন, জিয়াউর রহমানের রাজনীতি থেকে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি বেটার।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ নতুন নয় জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসায় আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর সঙ্গে অনেকদিন ঘুমিয়েছেন। আমি তো প্রাইম মিনিস্টার বা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কখনো কোনও বক্তৃতায় কিছু বলিনি। গণমাধ্যমের কেউ কেউ খোঁচাতে চেয়েছিল, আমি কখনো বলিনি, নেভার।

জামিন আদেশের সঙ্গে ভোটে আসার সিদ্ধান্তের কোনো সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেন বিএনপির সাবেক এ নেতা বলেন, সুপ্রিম কোর্টে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে বিচারিক আদালত জামিন আবেদন বিবেচনা করেছে।

সাবেক এই আইন প্রতিমন্ত্রী রাজধানীর নিউ মার্কেট থানা এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগের মামলায় বুধবার (২৯ নভেম্বর) জামিন পেয়ে মুক্ত হয়েছেন।

জানা যায়, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা দুই দিনের অবরোধের আগের দিন ৪ নভেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে নিউ মার্কেট এলাকার গাউছিয়া মার্কেটের পাশে মিরপুর সুপার লিংক লিমিটেডের একটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে বাসটির প্রায় ৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় বাসের চালক বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। ওইদিন মধ্যরাতে রাজধানীর বনশ্রী থেকে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

পরদিন ৫ নভেম্বর এ মামলায় শাহজাহান ওমরের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পরে ৯ নভেম্বর চার দিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও প্রতিরোধ টিমের পরিদর্শক সাইরুল ইসলাম। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালত।

এএইচআর/এসএম