একতরফা নির্বাচন আ.লীগকে নির্বাসনে পাঠাবে : গণতন্ত্র মঞ্চ
একতরফা নির্বাচন আওয়ামী লীগকে নির্বাসনে পাঠাবে বলে মন্তব্য করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন, আমি জানি, তাদের উদ্দেশ্য কী? তারা বলে কোনো রকমে ৭ জানুয়ারি আসলে তো হয়… বিভিন্ন জায়গায় একটা বাক্স বসিয়ে বেড়া-টেরা দিয়ে একটা ঘর দেখাব এবং তারপরে সন্ধ্যার পর রায় ঘোষণা দেব। ওটা তো আসলে নির্বাচনই না, ঠেকাব কী? আমরা ওই বেড়ার ঘরে আগুন লাগানোর কাজ করছি না।
রোববার (২৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চের মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। গত ২৮ অক্টোবরের পর আজই প্রথম গণতন্ত্র মঞ্চের মিছিল ও সমাবেশে মাঠের রাজনীতিতে দেখা যায় মান্নাকে।
বিজ্ঞাপন
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘যেভাবে চেষ্টা করুক, তারা এ নির্বাচন প্রহসনের বাইরে আর কিছু করতে পারবে না। আমরা বলছি যে, জনগণ এই নির্বাচন প্রত্যাখান করেছে, বিশ্ব বাসী প্রত্যাখান করেছে। তারপর ওই যে বললাম, আসিতেছে শুভ দিন, দিনগুলো গুনতে থাকেন। দেখেন কী হয়। এ নির্বাচন সরকারের জন্য, আওয়ামী লীগের জন্য কোনো নির্বাচন নয়… এটা ওদের নির্বাসনে পাঠাবে… অপেক্ষা করুন।’
এসময় সরকার পতনের আন্দোলন ছেড়ে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণার বিষয়টি ইঙ্গিত করেন তিন। বলেন, ‘একজন বিরাট মোচওয়ালা জেনারেল… এখন এলাকায় যেতে পারেন কি না সন্দেহ। দেখেন, আসিতেছে শুভ দিন, দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ। যারা যা-ই করে পার পাবেন না।’
ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, ‘সরকার না বলুক... টিভিতে বলছে যে, অবরোধে দূরপাল্লার কোনো বাস চলছে না। দূরপাল্লার বাসগুলো কাউন্টারে দাঁড়িয়ে আছে… যাত্রী পাচ্ছে না। এক মাস ধরে মানুষ বিরোধী দলের এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতায় আছে, আরও থাকবে। আমরা বলি, ওই ফোর-টোয়েন্টির নির্বাচন যা-ই দেখাক ওরা, লড়াই বন্ধ হবে না, লড়াই চলবে।’
‘ওরা রাজাকারও পাচ্ছে না’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সরকার চেষ্টা করেছিল বিভিন্ন দল ভাঙতে, নতুন-নতুন দল করতে। খেয়াল করে দেখুন পাকিস্তান আমলেও কিন্তু রাজাকার পাওয়া গেছে, এবার তো রাজাকারও পাওয়া যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ এবারে রাজাকার-আলবদরও পায় না। নতুন-নতুন ক্যান্ডিডেড দেবে তাও পায় না।’
তিনি বলেন, ‘এই যে জোনায়েদ সাকিকে (গণসংহতি আন্দোলন) সব মিছিলে আপনারা দেখেন। তার দল নিবন্ধনের জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছিল… তবে নির্বাচন কমিশন দেয়নি। তিনি আদালতেও গেছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাদেরকে দেয়নি। কিন্তু বিএনএম-টিএনএম-এএনএম কত নামের দল রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে। ওরা বলছে, ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে…। ওদের প্রেসিডেন্টে-সেক্রেটারির বাইরে তিন নম্বর লোক নেই। তাহলে ৩০০ আসনে প্রার্থী কীভাবে দেবে?’
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘একটা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস মোকাবিলা করে ও ত্রাসের রাজত্ব মোকাবিলা করে দেশব্যাপী অবরোধ চলছে। মাঝে-মধ্যে আমরা বিরতি দেই জনজীবনের জন্য। বাচ্চাদের পরীক্ষা চলছে... মানুষ যেন স্বস্তির মধ্যে থাকে। কিন্তু চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য তৈরি হন। ২৮ অক্টোবরের পরে সরকার যে তাণ্ডব শুরু করেছে, দেশব্যাপী সমগ্র আন্দোলন নতুনভাবে আবার পুনর্গঠিত হচ্ছে। মানুষ জেগে উঠছে, কারণ তারা ধরে নিয়েছে যে, এই সরকার থাকলে দুর্ভিক্ষ অনিবার্য। মানুষকে না খেয়ে মরতে হবে। সেই লড়াইয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ ভোটের অধিকার রক্ষা করবে, মানুষকে রক্ষা করবে ও দেশকে রক্ষা করবে।
ভারতের উদ্দেশে সাইফুল হক বলেন, ‘এখানে কোনো নির্বাচন হচ্ছে না, হচ্ছে একতরফা নির্বাচন। এখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়… ভারতের যে জনগন, আমি মনে করি ১৪ ও ১৮ সালের মতো মেহেরবানি করে এক ঝুড়িতে সমস্ত ডিম রাখবেন না। ভারতের গণতান্ত্রিক মানুষ, ভারতের কোটি কোটি মানুষ তারা দেখতে চাইবে বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক সরকার, তারা দেখতে চাইবে এখানে অবাধ নিরপেক্ষ বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হচ্ছে।’
‘আরেকবার যদি আপনারা চোরের সাক্ষীর মতো এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে মদদ যোগানোর চেষ্টা করেন, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না। কোনো কর্তৃত্ববাদী পরাশক্তি যারা আমাদের এই দুর্ভোগের সুযোগ নিচ্ছে, তাদের কাউকেও ক্ষমা করবে না।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সরকার ভোট ছাড়া ক্ষমতায় আছে… ক্ষমতা আঁকড়ে আছে। ওয়ান ইলেভেনের সরকারের রূপ তারা ধারণ করছে। ওয়ান ইলেভেনে সরকার কী করেছিল? এই দল থেকে ওই দল থেকে লোক ভাগিয়ে এনে কিংস পার্টি বানিয়েছিল… আর এখন শেখ হাসিনা গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে এই দল থেকে ওই দল থেকে লোক ভাগিয়ে এনে কিংস পার্টি বানাচ্ছেন।’
নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম ও জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনসহ অনেকে।
এএইচআর/কেএ