নৌকার প্রার্থীকেই ডামি প্রার্থী রাখার নির্দেশ
বিনা ভোটে নির্বাচিত হলে ব্যবস্থা, হুঁশিয়ারি শেখ হাসিনার
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দলীয় প্রার্থীদের সাবধান করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এছাড়া নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করার নির্দেশও দেন।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
রোববার (২৬ নভেম্বর) সকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সাক্ষাৎ করতে গেলে এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন একাধিক মনোনয়নপ্রত্যার্শী।
শেখ হাসিনা বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ পাস করে আসতে পারবেন না। প্রত্যেক প্রার্থীকেই একজন করে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখতে হবে।
সূত্রমতে, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে উৎসবমুখর ও প্রতিযোগিতামূলক করতে নৌকার প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা অন্যান্য দলের কেউ প্রার্থী হলে তাকেও সহযোগীতা ও উৎসাহ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রধান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী জানান, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ যদি কোনো আসনে জয়ী হয়, তাহলে বিজয়ী প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দলীয় প্রধান জানিয়েছেন। দলীয় প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি দলের যে কোনো নেতা বা যে কোনো ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবে বলেও নির্দেশনা দিয়েছেন।
আরেক প্রার্থী জানান, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে প্রয়োজনে ডামি প্রার্থী রাখতে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। একইসঙ্গে নির্বাচনের সময় ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতেও নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ প্রধান।
সভায় উপস্থিত একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী বলেন, নেত্রী বলেছেন— আপনারা সাড়ে তিন হাজারের মতো প্রার্থী। এর মধ্যে থেকে আপনারাই আমাকে ৩০০ নাম দেন। পরে উপস্থিত সবাই নেত্রীকে দায়িত্ব দেন। আরেকটা হচ্ছে— নেত্রী ডামি প্রার্থী রাখতে বলছেন। আবার যে কেউ চাইলে নির্বাচন করতে পারবে বলেও জানিয়েছেন।
এর আগে সকাল থেকেই গণভবনের প্রবেশ পথে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। মোট ৩ হাজার ৩৬২ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী আজ গণভবনে এসেছেন। দিনব্যাপী সভা শেষে বিকেলে নৌকা প্রতীকে মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হবে।
গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের গণভবনে ডাকা হয়।
আরও পড়ুন
এদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি চলে গত ১৮ নভেম্বর থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। এই চার দিনে ৩৩৬২ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ফরম সংগ্রহ করেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ১৮ থেকে ২১ নভেম্বর বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। এই চার দিনে মোট তিন হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে অনলাইনে ১২১ জন ফরম কিনেছেন। ফরম বিক্রি করে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা আয় হয়েছে দলটির।
ঢাকা বিভাগে বিক্রি হয়েছে ৭৩০টি ফরম। চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৫৯টি, সিলেট বিভাগে ১৭২টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৯৫টি, বরিশাল বিভাগে ২৫৮টি, খুলনা বিভাগে ৪১৬টি, রংপুর বিভাগে ৩০২টি এবং রাজশাহী বিভাগে ৪০৯টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। কয়েকটি বাদে প্রতিটি আসনে নৌকার মাঝি হতে লড়ছেন ১১ জন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া সংসদ নির্বাচনের জন্য ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এমএসআই/এমজে