বিএনপির সমাবেশে আমিরুল নামে একজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এসময় প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ পুলিশ বক্সে আগুন ও বাস ভাঙচুর করা হয়। ২৮ অক্টোবর ও এর পরে অনেক বাসে অগ্নিকাণ্ড ঘটে রাজধানীতে। এসব ঘটনায় ৮৯টি মামলা করা হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। তবে পুলিশ হত্যা ও বিচারপতির বাসভবনে হামলার ২ মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপির সব শীর্ষ নেতাদের। দলটির মহাসচিবকে গ্রেপ্তার করা হলেও রিজভীসহ অনেক সিনিয়র নেতা এখনো প্রকাশ্যে দলের কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। তাদের গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ।

বিএনপির কর্মসূচিতে নাশকতার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২ হাজার ৩৫৫ জনকে। গ্রেপ্তারের তালিকায় রয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ অনেক নেতা। তবে এখনো দলটির অনেক হাইপ্রোফাইল নেতা পুলিশ হত্যা ও প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলার আসামি পলাতক রয়েছেন। তাদের অবস্থান এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। তাদের মধ্যে অনেকে আবার ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচিও ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছেন।

প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা মামলায় এখনো যারা পলাতক মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলায় আসামির তালিকায় রয়েছেন— বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রুহুল কবির রিজভী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, বরকতউল্লা বুলু, জয়নুল আবেদিন ফারুক, জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরীসহ অনেকে।

এই মামলায় এখন পর্যন্ত বিএনপির হাইপ্রোফাইল নেতাদের মধ্যে গ্রেপ্তার আছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বাকি হাইপ্রোফাইল নেতারা এখনো পলাতক রয়েছেন।

অন্যদিকে পুলিশ হত্যা মামলার আসামি হলেন— বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি নেতা মীর্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আ. সালাম ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক নিপুণ রায়সহ অনেকে। এই মামলায়ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু গ্রেপ্তার আছেন। বাকিরা পলাতক রয়েছেন।

২৮ অক্টোবর পুলিশ সদস্য আমিরুল হত্যার ঘটনায় মামলা হয় ডিএমপির পল্টন থানায়। এই মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পলাতক আসামিদের বিষয়ে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান চলছে।’

এদিকে পুলিশের পক্ষও থেকে ‘পলাতক’ বলা হলেও রুহুল কবির রিজভীকে প্রতিদিনই অনলাইন ব্রিফিং এবং সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দলীয় কর্মসূচি এবং বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে। আবার বিএনপির দ্বিতীয় দফার অবরোধের দ্বিতীয় দিনে সোমবার (৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে খিলগাঁও তালতলা পল্লিমা সংসদ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, বিচারপতি বাসভবনের হামলার মামলা দায়ের হয়েছে রমনা থানায় ও পুলিশ হত্যা মামলাটি দায়ের হয়েছে পল্টন থানায়। তবে এই মামলা দুইটির ছায়া-তদন্ত করছে ডিবি ও র‍্যাব।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘মামলা দুইটি ছায়া-তদন্ত করছে ডিবি ও র‍্যাব। এই মামলাগুলো আসামিদের মূলত গ্রেপ্তার করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।’

পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার কে.এন.রায় নিয়তি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এই দুই মামলায় যেসব আসামিরা পলাতক রয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ কাজ করছে। তাদের অবস্থান নিশ্চিত করণে চলছে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

এমএসি/এআর