স্লোগান দিয়ে, ছবি তুলে দুই মিনিটে ‘হাওয়া’ বিএনপি নেতাকর্মীরা
সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিএনপি-জামায়াত ও বিরোধী দলগুলোর দেশব্যাপী তিন দিনের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন আজ। অবরোধকে কেন্দ্র করে সকাল ৭টার দিকে রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা সড়কে অবস্থান নিতে চাইলেও পুলিশের বাধার মুখে সুবিধা করতে পারেনি বিএনপি নেতাকর্মীরা।
পুলিশ জানায়, স্লোগান দিয়ে, ছবি তুলে দুই মিনিটের মধ্যে সড়ক থেকে হাওয়া হয়ে যায় তারা।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত রাজধানীর বাড্ডা, লিংক রোড, নতুন বাজার এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে এ তথ্য জানা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড্ডা-রামপুরা সড়কে অন্য দিনের মতোই সাধারণ মানুষ নিজ নিজ গন্তব্যে বের হয়েছেন। এমনকি সড়কে আস্তে আস্তে সব ধরনের যানবাহন নামতে শুরু করেছে। অফিসগামী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়কে অবরোধের কোনো প্রভাব তারা দেখেননি। কেউ কেউ বাসা থেকে একটু ভয়-আতঙ্ক নিয়ে বের হয়েছিলেন। তবে সড়কে স্বাভাবিক অবস্থা দেখে তাদের সেই ভয় কেটে গেছে।
জানতে চাইলে বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সৌমিত্র সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল ৭টার দিকে বাড্ডার কনফিডেন্স টাওয়ারের সামনে বিএনপি নেতাকর্মীরা ১/২ মিনিটের জন্য জড়ো হয়ে স্লোগান দেওয়া শুরু করেছিল। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা দ্রুত ছবি তুলে সড়ক ছেড়ে দেয়।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত অবরোধের তেমন কোনো প্রভাব রাজধানীতে দেখা যায়নি। অন্য দিনের মতোই বাস, সিএনজিসহ সব ধরনের যানবাহন চলছে। সব কিছু স্বাভাবিক আছে।
আরও পড়ুন
সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিএনপি-জামায়াত ও বিরোধী দলগুলোর দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। তিন দিনের এ অবরোধ কর্মসূচি চলবে ২ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত।
শনিবারের মহাসমাবেশ পণ্ড এবং সেখানে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে রোববার (২৯ অক্টোবর) সারা দেশে বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যার হরতাল পালিত হয়েছে। এরপর রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঘোষণা করেন, ৩১ অক্টোবর (মঙ্গলবার) থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা অবরোধ পালন করবে বিএনপি ও এর শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ।
তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে হামলা, নেতা-কর্মীদের হত্যা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মীর গ্রেপ্তার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি হয়রানি ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।
অন্যদিকে, সোমবার (৩০ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে সারা দেশে তিন দিনের (৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর) সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে তিন দিনের এ কর্মসূচি কীভাবে পালন করা হবে তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানায়নি বিএনপি কিংবা অন্যান্য দলগুলো।
গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষের পর ২৯ অক্টোবর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করা হয়। এরপর থেকে এক প্রকার আত্মগোপনে চলে যান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা।
বিএনপি নেতারা বলছেন, কখনও কখনও আত্মগোপনে চলে যাওয়াটাও আন্দোলনের কৌশল। কারণ এখন আত্মগোপনে থাকলেও নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করতে পারছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া যাচ্ছে। কিন্তু প্রকাশ্যে থাকলেও গ্রেপ্তার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তখন আর কিছুই হবে না। তবে, খুবই শিগগিরই নেতারা আবার প্রকাশ্যে আসবে এবং রাজধানীতে আন্দোলন গড়ে তুলবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, অবরোধ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে সংবাদপত্রের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন সিলিন্ডার গাড়ি ও জরুরি ওষুধ পরিবহন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে। সেই নির্দেশনা দেওয়া আছে। কোথায় কীভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হবে, সেটা এখন বলতে চাই না।
এর বাইরে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট ও গণঅধিকার পরিষদ বিজয় নগর, প্রেস ক্লাব এলাকায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে বলেও জানা গেছে। অন্যদিকে জামায়াত মঙ্গলবার ভোর দিকে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধের সমর্থনে মিছিল করতে পারে বলেও জানা গেছে।
টিআই/এসএসএইচ