আন্দোলন-আন্দোলন খেলা বন্ধ করে নির্বাচনে আসুন, বিএনপিকে হানিফ
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপির ভরসা বিদেশি প্রভু। তাদের ওপর ভর করে করা আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে। এখনো সময় আছে আন্দোলন-আন্দোলন খেলা বন্ধ করে নির্বাচনে আসুন।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি-জামায়াত কর্তৃক পুলিশ হত্যা, কাকরাইল মসজিদ ও রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে অগ্নিসংযোগ, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার প্রতিবাদে ১৪ দল আয়োজিত সমাবেশে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, আপনারা অনেক আন্দোলন করেছেন। আন্দোলন আন্দোলন খেলা শেষ হয়ে গেছে। আপনাদের আন্দোলনের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক নেই। আমরা আগেও বলেছি যে আন্দোলনে মানুষের সম্পর্ক নেই, সেই আন্দোলন সফল হতে পারে না। আজ তা প্রমাণিত হয়েছে।
সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচন হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। নির্বাচনে অংশ নিয়ে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করুন এবং সেই সঙ্গে নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করুন।
আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, গত ২৮ তারিখে নতুন করে আবার বিএনপি এবং জামায়াতের নেতৃত্বে নতুন করে সহিংসতা দেখা গেল। এর মধ্য দিয়ে আবার বিএনপির স্বরূপ উন্মোচিত হলো।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ ভেবেছিল বিএনপি নামক সন্ত্রাসী দলটি অতীতে যেভাবে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে হয়ত সহিংসতার পথে পা বাড়াবে না। কিন্তু জনগণকে ভুল প্রমাণ করেছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের তৈরি দল বিএনপি। এরা পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসী। ২৮ তারিখে আবার সহিংসতা করে প্রমাণ করেছে এরা দেশে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপরে বাইরে নেই।
আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে বিশেষ করে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করা জন্য হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী হত্যা করেছে। বিএনপির সন্ত্রাসীরা সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ কিবরিয়া, আহসানুল্লাহ মাস্টার, নাটোরের মমতাজ উদ্দিন ও খুলনার মঞ্জুরুল ইমামের মতো সিনিয়র নেতাদের প্রকাশ্যে গুলি করে, বোমা মেরে হত্যা করেছিল।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করে বর্বোরোচিত হামলা চালানো হয়েছিল। আমাদের ২৪ জন নেতা-কর্মী প্রাণ হারিয়েছিলেন, ৫০০ জন আহত হয়েছিলেন। দেশের ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা ঘটিয়ে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচয় পরিচিত করেছিল। আদালত প্রাঙ্গণে বোমা হামলা চালিয়েছিল। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গিরা বিচারপতি হত্যা করেছিল। এমনকি ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার হোসেনের ওপর বোমা হামলা হয়েছিল।
হানিফ বলেন, বিএনপি সাথে একাত্তরের মানবতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামী; যারা একাত্তরে মানুষের বাড়ি ঘরে নির্বিচারে অগ্নিসংযোগ করেছিল, মা-বোনদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছিল তারা যখনি যোগ দিয়েছে বিএনপি একই চরিত্রে গিয়েছে।
শুধু সরকারে থাকতে নয়; বিরোধী দলে থাকা অবস্থায়ও তারা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করেছে। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে আন্দোলন করে দেশ অস্থিতিশীল করেছিল। ২০১৪ সালে নির্বাচন বানচাল করার জন্য সারাদেশে ৫০০ স্কুলে আগুন দিয়েছে, ২ জন প্রিসাইডিং অফিসারকে হত্যা করেছে। ২০১৫ সালে ৯৬ দিন অবরোধের নামে আগুনে পুড়িয়ে সাড়ে তিনশ মানুষ হত্যা করেছে। তিন হাজারের বেশি মানুষকে পুড়িয়ে আহত করেছে। এদের সহিংসতা কখনো বন্ধ হয়নি। এরা মানুষকে দমিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চায়— বলেন তিন।
আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২৮ অক্টোবর আন্দোলনের নামে পুলিশ হত্যা করেছে, পুলিশদের আহত করেছে, ৩০ জনের বেশি সাংবাদিককে আহত করেছে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করেছে। এরা আইনের শাসন, বিচার ব্যবস্থায় বিশ্বাসী নয়। এরা ক্ষমতায় থাকতে নিজেরা দেশকে জঙ্গিবাদের ব্যর্থ রাষ্ট্র বানিয়েছিল।
তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই, দেশের মানুষ শান্তি উন্নয়ন-অগ্রগতি দেখতে চায়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করছেন। সেখানে তারা উন্নয়ন ব্যাহত করতে চায়। আন্দোলনের নামে সহিংসতা করার জন্য আবার যদি কখনো রাজপথে নামেন ১৪ দলের নেতাকর্মীরা শক্তভাবে আপনাদের প্রতিহত করে নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেবে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু এমপি।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন— আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী প্রমুখ।
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস।
ওএফএ/এমএ