সবজি বিক্রেতা ও রোগী সেজে ঢাকায় আসছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা
এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসমাবেশের অনুমতি পায়নি বিএনপি। কিন্তু তার আগে নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়েছে দলের হাজারো নেতাকর্মী। তবে এদের বেশিরভাগই ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন। নানা কৌশলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা রাজধানীতে প্রবেশ করছেন।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর ) বেলা সাড়ে ৩টায় নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর বাইরে থেকে আসা নেতাকর্মীরা উৎসবমুখর পরিবেশে মিছিল ও বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। যদিও জুমার নামাজের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষ থেকে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের জড়ো না হতে মাইকিং করা হয়। দলের শীর্ষ নেতার না সত্ত্বেও বেলা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে নয়াপল্টনে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে।
বিজ্ঞাপন
আগামীকালের এ মহাসমাবেশ যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন সিলেটের হাটখোলা ইউনিয়ন যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা মুজিবুর রহমান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অভিনব কৌশলে ঢাকায় প্রবেশ করেন ৫০ ঊর্ধ্ব এ বিএনপি নেতা।
বিকেলে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে কথা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন, পুলিশ যেন তাকে রাস্তায় না আটকায় তার জন্য সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন পাসপোর্ট। যেন পুলিশ ধরলে বলতে পারেন তিনি বিদেশগামী যাত্রী। এ কৌশলে তিনি সফল হয়েছেন।
মুজিবুর রহমানের মতো কৌশল অবলম্বন করে ভৈরব থেকে ট্রেনে ঢাকায় এসেছেন মিলন। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, এলাকা থেকে কিছু সবজিভর্তি টুকরি নিয়ে ঢাকায় এসেছেন। পরে সেই সবজি কমলাপুর স্টেশনে বিক্রি করে দিয়েছেন। ঢাকায় প্রবেশের পর গতকাল রাতে এলাকার এক চাচার মেসে ছিলেন। দুপুরের পর থেকে নয়াপল্টন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন।
কাল সমাবেশে শেষে আবার এলাকায় ফিরে যাবেন বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন
শুধু তারা দুজন নয় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন তৃণমূলের অসংখ্য নেতাকর্মী। বগুড়ার জয়পুরহাট থেকে রোগী সেজে ঢাকায় এসেছেন আবুল কামাল ও আব্দুর রহিম।
কীভাবে ঢাকায় প্রবেশ করেছেন— এ বিষয়ে তারা জানান, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। গাবতলীতে পুলিশের তল্লাশির সময় ডাক্তার দেখাতে এসেছেন বললে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে রেড ক্রিসেন্টের একজন চিকিৎসককেও দেখান। কাল সমাবেশ শেষে আবার এলাকায় ফিরে যাবেন তারা।
তবে ছবি তুলতে চাইলে এলাকায় গিয়ে ঝামেলায় পড়ার আশঙ্কায় রাজি হননি।
এদিকে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং আশপাশের গলিতে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশের অনুমতি প্রসঙ্গে শুক্রবার বিকেলে নাইটিঙ্গেল মোড়ে ডিবি প্রধান হারুন উর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই দলই সমাবেশে অনুমতি পাবে। তবে স্থানের বিষয়ে এখনই বলা যাচ্ছে না। স্থানের বিষয়টি খুব দ্রুতই জানিয়ে দেওয়া হবে তাদের।
শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ৪০২০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ডিএমপি সূত্র জানায়, পছন্দের জায়গায় সমাবেশ করতে দুই দল ও পুলিশের মধ্যে চিঠি চালাচালির পর অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে তাদের এ অনুমতি দেওয়া হতে পারে। তবে বিশৃঙ্খলা করলে পুলিশ সর্বোচ্চ কঠোর হবে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার বিকল্প দুটি ভেন্যুর নামসহ ৭টি তথ্য চেয়ে আওয়ামী লীগকে চিঠি দেয় পুলিশ। পরে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পুলিশের চিঠির চাওয়া সব তথ্য দেওয়া হয়।
আগামী ২৮ অক্টোবর বিকেলে ঢাকার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে বিএনপি। একই দিন আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের ডাক দিলে তা নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এএইচআর/এমজে