আ.লীগের সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রী
ভোট অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে, সবাইকে জিতে আসতে হবে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কাউকে জয়ী করার দায়িত্ব নিতে পারব না। ভোট অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। এই ভোটে সবাইকে জিতে আসতে হবে।
রোববার (২২ অক্টোবর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় তিনি এ কথা বলেন। সভার একাধিক সংসদ সদস্য গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
ভোট বানচালের ষড়যন্ত্র করে বিএনপি শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে আসতে পারে বলেও আওয়ামী লীগ সভাপতি মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে সূত্র। সংসদীয় দলের প্রধান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদ ভবনের সরকারি দলের সভাকক্ষে এক ঘণ্টারও বেশি সময় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এতে সংসদ সদস্যদের মধ্যে মোতাহার হোসেন, শামীম ওসমান, নূর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, কাজী কেরামত আলী, আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন নদভী, রুবিনা আক্তার মিরা, অ্যারোমা দত্ত প্রমুখ বক্তব্য দেন।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক একটি মহল বাংলাদেশে অনির্বাচিত সরকার দেখতে চায় বলে বৈঠকে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। সেই কারণে নির্বাচন বানচাল করতে পারলে একটি অনির্বাচিত সরকার এনে তাদের ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
সূত্র জানায় বৈঠকে জরিপের ভিত্তিতে যোগ্যদের মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী মনোনয়ন দেওয়া হবে। যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।
কাউকে জয়ী করার দায়িত্ব নিতে পারব না— মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোট অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। এই ভোটে সবাইকে জিতে আসতে হবে। কাউকে জিতিয়ে আনার দায়িত্ব আমি নিতে পারব না। আমি কারো চেহারা দেখে মনোনয়ন দেব না। দেখে-শুনে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের নমিনেশন দেব। এখানে যারা আছেন সবাই মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। যাকে নমিনেশন দেব তার জন্য কাজ করতে হবে। নমিনেশন পান, না পান নৌকার বিরোধিতা করা যাবে না। যারা নৌকার বিরোধিতা করবে, তাদের রাজনীতি চিরতরে শেষ হয়ে যাবে’— হুঁশিয়ার উচ্চারণ করেন তিনি।
আরও পড়ুন
আওয়ামী লীগ সভাপতি তার বক্তব্যে নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘তারা জানে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে। এ কারণে তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। নির্বাচন বানচাল করে একটি অনির্বাচিত সরকার বসাতে চায়। এটা করতে পারলে তাদের তারা ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।’
সভায় আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারে। সে কারণে নির্বাচন বাদ দিয়ে অনির্বাচিত সরকারকে চায় দেশি-বিদেশি অনেকে। কারণ, অনির্বাচিত সরকার হলে তাদের প্রভাব বিস্তার করতে সুবিধা হয়।’
‘নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, মনোনয়ন দেওয়া হবে বিভিন্ন জরিপের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে। যার গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা রয়েছে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপির চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করলে কোনো বাধা দেওয়া হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বলেন, ‘তারা আন্দোলন করতে চায়, করবে। কোনো সমস্যা নেই। আমরা বাধা দেব না। তবে অগ্নিসন্ত্রাস, ভাঙচুর করলে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা সব মোকাবিলা করে অভ্যস্ত। হেফাজত মোকাবিলা করেছি। জামায়াত-বিএনপি মোকাবিলা করেছি। এবারও করব।’
বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা বলেন, শেখ হাসিনা বৈঠকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। আমরাও যাতে নির্বাচনে অংশ না নিই, সেই ষড়যন্ত্র চলছে। এটা হলে তারা তাদের ইচ্ছেমতো ব্যক্তিদের ক্ষমতায় বসাতে পারবে। তবে, এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
জানা গেছে, বৈঠকে কাজী কেরামত আলী রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনা করেন। তার ভাইকে সাধারণ সম্পাদক করার পর থেকে তিনি নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন এলাকায় গিয়ে এমপিদের মিটিং করার জন্য। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের কথা হচ্ছে, তাদের অনুমতি ছাড়া কোনো মিটিং করা যাবে না। এমপি হয়েও কী তিনি এলাকায় যেতে পারবেন না— প্রশ্ন তোলেন তিনি।
শামীম ওসমান তার বক্তব্যে অন্তঃকোন্দল ভুলে গিয়ে আগামী নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করে শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
বৈঠকে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, আমাদের ত্যাগী নেতাকর্মী রয়েছে। তারপরও অন্য দলের প্রার্থীদের আসন ছেড়ে দেওয়া হয়। আমরা চাই, আমাদের চারটি সিটই (লক্ষ্মীপুর জেলার ৪ সংসদীয় আসন) আওয়ামী লীগের যেন হয়। আমরা সবাই এক জোট। আশা করি, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জিতে আসতে পারব।
এসআর/এসএসএইচ