সরকার পতনের এক দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে বুধবার রাজধানীতে সমাবেশ করবে বিএনপিসহ দলটির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত থাকা ৩৬টি রাজনৈতিক দল। আর এই সমাবেশ থেকে সরকারকে পদত্যাগ করতে আল্টিমেটাম দেবে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো। তবে এর জন্য সরকারকে কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হবে না। 

আন্দোলনে যুক্ত থাকা নেতারা বলছেন, কালকের সমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে না। গতানুগতিক ১ অথবা ২ দিনের কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। কিন্তু সরকারকে পদত্যাগ করতে একটি আল্টিমেটাম দেওয়া হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে সরকারকে পদত্যাগ করতে সময় বেঁধে না দেওয়ার কৌশল নেওয়া হয়েছে। কারণ, সময় বেঁধে দিলে তারপর থেকে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করার একটা বিষয় চলে আসবে। যেহেতু বিএনপির সিদ্ধান্ত হচ্ছে দুর্গাপূজার পরে সর্বাত্মক আন্দোলনে নামার, তাই সময় না বেঁধে দিয়ে আল্টিমেটাম দেওয়া হবে সমাবেশে থেকে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তন হচ্ছে। তবে, সেটা সরকারের অনুকূলে যাচ্ছে বলে আমরা মনে করি না। তার প্রমাণ সরকারের শীর্ষ মহলের নেতা-মন্ত্রীদের কথাবার্তায় এক ধরনের অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের বন্ধু ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি তার দেশে গতকাল এক অনুষ্ঠনে বলেছেন— ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক দুই দেশের মধ্যে, দুই দেশের জনগণের মধ্যে। এই সম্পর্ক কোনো নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে নয়। এখানে একটা বার্তা আছে আওয়ামী লীগের জন্য। যার ফলে বিরোধী দল আন্দোলন করে ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি করার আগে সরকারই এক ধরনের ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে দেশের মধ্যে। ফলে এই পরিস্থিতিতে পূজার মধ্যে কর্মসূচি দিলে সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর ওপর দায় চাপানো হতে পারে। তাই পূজার মধ্যে কর্মসূচি না দিয়ে পূজার পরেই কর্মসূচি দেওয়া হবে।   

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কালকের সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। সেখানে থেকে সরকারকে কোনো আল্টিমেটাম দেওয়া হবে না। এই বিষয়ে এখন কিছু বলতে চাই না।  

নাম না প্রকাশের শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, কালকের সমাবেশে থেকে সর্বাত্মক বা চূড়ান্ত আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ কোনো ঘোষণা আসবে না। পূজার পরে চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা আসবে। কারণ পূজার মধ্যে কর্মসূচি দিলে সেটাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করবে সরকার সহ বিভিন্ন মহল।

এই নেতা আরও বলেন, সমাবেশ থেকে চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা না এলেও সরকারকে একটা আল্টিমেটাম দেওয়ার আলোচনা আছে। সেই আল্টিমেটামের ঘোষণা দেওয়া এমন হতে পারে যে- আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সরকার পদত্যাগ না করলে আমরা সর্বাত্মক আন্দোলনে যাবো। আগামী ২৭-২৮ অক্টোবরের মধ্যে সেই সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু হবে।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, পূজার মধ্যে কোনো কর্মসূচি থাকবে না। পূজার পরে একটি সমাবেশের কর্মসূচি দিতে পারে। সেই সমাবেশ থেকে সর্বাত্মক আন্দোলনের ঘোষণা আসবে।   

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৪ অক্টোবর বেলজিয়াম সফরে যাবেন। সেখান থেকে ২৭-২৮ তারিখে দেশে ফিরবেন তিনি। তিনি দেশে ফিরে এলে ‘অল-আউট’ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তাই কালকে সমাবেশ থেকে সরকারকে সময় বেঁধে না দিয়ে পদত্যাগে ‘সফট’ একটা আল্টিমেটাম দেওয়া হবে। আর গতানুগতিক একটা কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।

গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার পদত্যাগ না করলে পূজার পরে আমরা ‘অল-আউট’ কর্মসূচিতে নামবো। সেই ধারাবাহিক কর্মসূচির ধরনের পরিবর্তনও আসবে।  

নাম না প্রকাশের শর্তে গণতন্ত্র মঞ্চের একটি শরিক দলের শীর্ষ নেতা বলেন, আগামী ২৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর ব্রাসেলস সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। এই সফর থেকে তিনি ২৭-২৮ তারিখ দেশে ফিরবেন। তিনি দেশে ফিরলেই চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা আসবে।

এদিকে বিএনপি সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের কথা মুখে বলে এলেও তাদের প্রস্তুতি নিয়ে কিছুটা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দলটির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত থাকা শরিকরা। তারা বলছেন- বিএনপি মুখে চূড়ান্ত আন্দোলনের কথা বললেও মাঠ পর্যায়ে তাদের সেই রকম প্রস্তুতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তারা এখনও বিদেশের ওপর অনেকটা নির্ভর হয়ে আছে। ফলে, আগের মতো কর্মসূচি পরে ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা থেকেই যায়। কারণ আমরা যেসব ছোট-ছোট দল আছি তারা তো চাইলে মাঠে ১ কিংবা ২ লাখ লোক নিয়ে নামতে পারবো না। 

কাল কোন দলের সমাবেশ কোথায়
সরকারের পদত্যাগ ও খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত সমাবেশ বুধবার দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সমাবেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সমাবেশের প্রস্তুতি ভালো। আগের সমাবেশগুলোর মতো এই সমাবেশও হবে শান্তিপূর্ণ। প্রতিদিনই আমাদের সমাবেশে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে। আশা করি, কালকের সমাবেশেও সাধারণ মানুষ অংশ নেবে।  

বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। এতে জোটের শীর্ষ নেতারা অংশ নেবেন।

এ ছাড়া ১২ দলীয় জোট বিকেল ৩টায় বিজয় নগর পানির ট্যাংকের সামনে সমাবেশ করবে। তাদের সমাবেশে জোটের নেতাদের পাশাপাশি আমন্ত্রিত অতিথি থাকার কথা রয়েছে গণ অধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি সভাপতি নুরুল হক নুর।  

সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট বিকেল ৫টায় পুরোনো পল্টন আলরাজী কমপ্লেক্সের সামনে, এলডিপি বিকেল ৩টায় কাওরান বাজার এফডিসি সংলগ্ন এলডিপি অফিসের সামনে, লেবার পার্টি বেলা ১১টায় পুরোনো পল্টন ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সামনে সমাবেশ করবে।

এএইচআর/এনএফ