সামনে দুর্গা পূজা, এ কারণে কঠোর কর্মসূচি দিচ্ছি না
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা এই মাসটা দেখতে চাই। সামনে দুর্গা পূজা আছে। সেজন্য আমরা কোনো কঠোর কর্মসূচি দিতে চাই না। এর মধ্যদিয়ে সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রাতে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কার্যালয়ের সামনে কেন্দ্রঘোষিত রোডমার্চ কর্মসূচি শেষে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, আপনারা নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন দেন। অন্যথায় জনগণ ক্ষমতা দখল করে ফেলবে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। শান্তিপূর্ণভাবে আমরা আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। সেজন্য আজকে আমি আপনাদের সামনে। অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
আরও পড়ুন
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে চট্টগ্রামে গণবিস্ফোরণ ঘটেছে। মানুষ জেগে উঠেছে। চট্টগ্রামের সব মানুষ আজ রাস্তায় নেমে এসেছে। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা টিকে আছে শুধু বন্দুকের জোরে। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে তারা ক্ষমতায় আছে।
তিনি বলেন, অনেক রোডমার্চ করেছি ও সমাবেশ করেছি। এবারেরটা শেষ রোডমার্চ কর্মসূচি। এরপর আর রোডমার্চ নেই। এরপর রাজধানীতে আন্দোলন হবে। আওয়ামী লীগকে পরিষ্কার করে বলতে চাই অনেক মানুষ খুন করেছ, হাত রক্তে রঞ্জিত করেছ, আমাদের ভাইদের গুম করেছ, অনেক মায়ের বুক খালি করেছ, অনেক স্ত্রীকে স্বামীহারা করেছ, অনেক সন্তানকে পিতাহারা করেছে। আর আমরা করতে দেব না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীকে বলতে চাই আর অযথা অন্যায় হুকুম নিয়ে গুলি করবেন না। অত্যাচার করবেন না। মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দেবেন না। মানুষ জেগে উঠেছে। তাই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে ভালো। আমরা সেটাই চাই। এখনো সময় আছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। আমাদের দফা একটা, দাবিও একটা। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। সুতরাং আপনি পদত্যাগ করবেন এবং সংসদ বিলুপ্ত করবেন। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দেবেন। নতুন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন দেবেন।
তিনি বলেন, ৯ অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তার বিদেশে চিকিৎসার জন্য সারাদেশে সমাবেশ এবং মিছিল, ১২ অক্টোবর ফ্যাসিস্ট সরকারের এক দফা পদত্যাগ দাবিতে ঢাকায় ছাত্র কনভেনশন, ১৪ অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ প্রেরণের দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগর শহরে অনশন, ১৬ অক্টোবর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকায় যুব সমাবেশ এবং ১৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ হবে। সে সমাবেশে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আমরা আশা করছি সেই কর্মসূচি যেন শেষ কর্মসূচি হয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। যদি আমাদের বাধা দেওয়া হয় এবং অন্যায়ভাবে হয়রানি-গ্রেপ্তার করা হয়, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেবে না। আঘাতের চেষ্টা করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ ভোট চোর। তারা সমগ্র বিশ্বের কাছে ভোট চোর হিসেবে পরিচিত লাভ করছে। ভোট চুরির জন্য তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। বিদেশিরা বাংলাদেশের নির্বাচন দেখতে চাই। আমরা বলি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। বিদেশিরা একই কথা বলছে। তারা বলছে ভোট চোরদের আমরা মানি না।
তিনি বলেন, ভিসা নীতিতে বলা হয়েছে, সরাসরি ভোট চুরি করলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। আবার পরোক্ষভাবে ভোট চুরি করলেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। আমরা জানি, এই ফ্যাসিস্টরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। তাই আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন ফায়সালা হবে রাজপথে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আমীর খসরু বলেন, এবার ভোট চোরদের পাহারা দিতে হবে। ভোট চোরদের মধ্যে আছে সরকারি কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আরও আছে লুটেরা ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদরা। এবার তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে পরোক্ষভাবে ভোট চুরিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। তাই তাদের গভীরভাবে নজরদারিতে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের হৃদয়ে কম্পন শুরু হয়েছে। কারণ তারা চুরি করে আমেরিকা যেসব সম্পদ জমা করেছে, সেগুলো বাজেয়াপ্ত হবে। তারাও জানে এবার আগের মতো ভোট চুরি করা যাবে না। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। আমরা কাউকে পাথর মারছি না। কাউকে আক্রমণ করছি না। সরকার আক্রমণ করছে। আমরা প্রতিবাদের মাধ্যমে আন্দোলন করছি। যদি বাধা দেন তবে প্রতিরোধ করব, প্রতিরোধ করব, প্রতিরোধ করব। আপনারা তৈরি থাকেন। সরকার পতনে বাংলাদেশের মানুষ আরেকদিন অপেক্ষা করতে চায় না।
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত রোডমার্চ কর্মসূচি বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লা থেকে শুরু হয়। সেখানে প্রথমে জনসভা আয়োজন করা হয়। এরপর ফেনীর মহিপালে দ্বিতীয় জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর চট্টগ্রামের দিকে রওনা দেয় বিএনপির রোডমার্চের বহর। চট্টগ্রামে প্রথমে মিরসরাই উপজেলায় পথসভা হয়।
এমআর/এমজে